মহিলা হাত বাড়িয়ে দেখালো, লম্বা, সরু, এক-মোচড় দেওয়া লেড়ো বিস্কুটের দিকে। দোকানি একবার প্লাটফর্মে বসে থাকা লোকটি আরেকবার মহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনটে বিস্কুট বের করল। মহিলার কোলে একটা ধেড়ে বাচ্চা। সে দুমড়ে মুচড়ে শরীরটাকে স্থির করতে চেষ্টা করছে, লেড়ো বিস্কুটের মতো।
মহিলার পায়ের কাছে প্লাটফর্মে বসে থাকা লোকটির কোনো নেশা নেই, দাঁত দেখেই বোঝা যায়, ঝকঝকে, দাঁতে করে কামড়ে মুখ ভর্তি লেড়োর পেষ্ট বানিয়ে অনেকক্ষণ ধরে তারিয়ে তারিয়ে এ গাল আর ও গাল করছে। ছেলেটিকে কোল থেকে নামাতেই বোঝা যায়, স্পেশাল চাইল্ড। প্রথমেই শুয়ে পড়েছে নোংরা প্লাটফর্মে। তারপর নখ দিয়ে আঁচড় কেটে কেটে কী যেন আঁকতে যায়। বাঁ হাতের বিস্কুটটা মুখে পুরতে পারছে না। মা বোঝে।
মা বোঝে এক দুপুর খিদে নিয়ে বাচ্চার কী হয়। নিজের বিস্কুট মুখে চালান করে বাচ্চাকে তার বিস্কুটটি একটু করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেয়। মহিলার হাত যখন কাজ করে, চোখ তখন ব্যস্ত উল্টো দিকের প্লাটফর্মে, হলুদ রঙের খোঁজে। হঠাৎ, এক অদ্ভুত গোঙানি শুনে সচকিত মহিলা দোকানির দিকে তাকিয়ে বলে, "একটু চা দিবেন?"
চা দিতে গিয়ে দোকানি বোঝে লোকটি অন্ধ। স্মৃতিতে স্বাদ আছে, রঙ নেই। ওদিকে ধেড়েটি ফের কোলে উঠে মায়ের ব্লাউজের হুক ধরে টানাটানি শুরু করেছে। মহিলার একটা হাত ছেলেকে আটকাতে ব্যস্ত, মহিলার শরীর ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছে অন্ধ ব্যক্তি, মহিলার চোখে ট্রেন মিস করার আশঙ্কা, এসময়ে দোকানি বলে উঠলো, “ তিন দুয়ে ছয় আর চার মিলে দশ টাকা। “
পয়সা? সে তো সারের বস্তা কাটা থলির ভিতরে। ওদিকে একটা ট্রেন ঢুকছে। গেটের কাছে বাবুটি বলে দিয়েছিল একটু পরেই ওদিকে দিয়ে আসবে হলুদ ট্রেন। এটা হলুদ তো? সে অন্ধ নয়, তাই রক্ষে।
একটা থালা-বাটি , দুটো ন্যাকড়া, ছোটো গামছা একটি, একটা দাঁতন, দুটো প্রেসক্রিপশন, একটি শিশি, ওষুধের পাতা বেরোনোর পর বেরোলো একটি প্যারাশুট নারকেল তেলের বড়ো মুখওয়ালা কৌটো। সেখান থেকে দশ টাকার নোট বের করে ফের সবগুলো থলিতে ঢোকাতে ঢোকাতে ছেলেটি ওর ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে বাম স্তনটি বের করে ফেলেছে। পিছনে পিঠ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে লোকটি। একটি উন্মুক্ত স্তন নিয়ে দোকানির টাকা চুকিয়ে থলি হাতে মহিলা জোর পায়ে হাঁটতে থাকে হলুদ রঙের ট্রেনের দিকে। কোলে ছেলে, পিঠে হাত দিয়ে তাকে ছুঁয়ে ছুটছে লোকটি, তার বর নিশ্চয়। মুক্ত স্তন, একদম শুকনো, ভারহীন, পাখির পালকের মতো।
স্তন জোরে জোরে নড়ছে, ট্রেনটিও একটু নড়ে উঠলো যেন। স্তন মুখে পোরার সুযোগ পাচ্ছে না, বাচ্চাটির গলা ফাটা চিৎকার ট্রেনের হুইশলকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এখনও অনেকটা বাকি। তিনজন তিনজনকে স্পর্শ করে ছুটছে একটা বৃহৎ শরীরের মতো। যে শরীরে তিনটে মুখ, তিনটে পেট, তিনটে পায়ু, ছটা পা, দুটো চোখ, একটা মাথা, দুটো হাত......
Biplab Das
18-06-19
মহিলার পায়ের কাছে প্লাটফর্মে বসে থাকা লোকটির কোনো নেশা নেই, দাঁত দেখেই বোঝা যায়, ঝকঝকে, দাঁতে করে কামড়ে মুখ ভর্তি লেড়োর পেষ্ট বানিয়ে অনেকক্ষণ ধরে তারিয়ে তারিয়ে এ গাল আর ও গাল করছে। ছেলেটিকে কোল থেকে নামাতেই বোঝা যায়, স্পেশাল চাইল্ড। প্রথমেই শুয়ে পড়েছে নোংরা প্লাটফর্মে। তারপর নখ দিয়ে আঁচড় কেটে কেটে কী যেন আঁকতে যায়। বাঁ হাতের বিস্কুটটা মুখে পুরতে পারছে না। মা বোঝে।
মা বোঝে এক দুপুর খিদে নিয়ে বাচ্চার কী হয়। নিজের বিস্কুট মুখে চালান করে বাচ্চাকে তার বিস্কুটটি একটু করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেয়। মহিলার হাত যখন কাজ করে, চোখ তখন ব্যস্ত উল্টো দিকের প্লাটফর্মে, হলুদ রঙের খোঁজে। হঠাৎ, এক অদ্ভুত গোঙানি শুনে সচকিত মহিলা দোকানির দিকে তাকিয়ে বলে, "একটু চা দিবেন?"
চা দিতে গিয়ে দোকানি বোঝে লোকটি অন্ধ। স্মৃতিতে স্বাদ আছে, রঙ নেই। ওদিকে ধেড়েটি ফের কোলে উঠে মায়ের ব্লাউজের হুক ধরে টানাটানি শুরু করেছে। মহিলার একটা হাত ছেলেকে আটকাতে ব্যস্ত, মহিলার শরীর ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছে অন্ধ ব্যক্তি, মহিলার চোখে ট্রেন মিস করার আশঙ্কা, এসময়ে দোকানি বলে উঠলো, “ তিন দুয়ে ছয় আর চার মিলে দশ টাকা। “
পয়সা? সে তো সারের বস্তা কাটা থলির ভিতরে। ওদিকে একটা ট্রেন ঢুকছে। গেটের কাছে বাবুটি বলে দিয়েছিল একটু পরেই ওদিকে দিয়ে আসবে হলুদ ট্রেন। এটা হলুদ তো? সে অন্ধ নয়, তাই রক্ষে।
একটা থালা-বাটি , দুটো ন্যাকড়া, ছোটো গামছা একটি, একটা দাঁতন, দুটো প্রেসক্রিপশন, একটি শিশি, ওষুধের পাতা বেরোনোর পর বেরোলো একটি প্যারাশুট নারকেল তেলের বড়ো মুখওয়ালা কৌটো। সেখান থেকে দশ টাকার নোট বের করে ফের সবগুলো থলিতে ঢোকাতে ঢোকাতে ছেলেটি ওর ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে বাম স্তনটি বের করে ফেলেছে। পিছনে পিঠ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে লোকটি। একটি উন্মুক্ত স্তন নিয়ে দোকানির টাকা চুকিয়ে থলি হাতে মহিলা জোর পায়ে হাঁটতে থাকে হলুদ রঙের ট্রেনের দিকে। কোলে ছেলে, পিঠে হাত দিয়ে তাকে ছুঁয়ে ছুটছে লোকটি, তার বর নিশ্চয়। মুক্ত স্তন, একদম শুকনো, ভারহীন, পাখির পালকের মতো।
স্তন জোরে জোরে নড়ছে, ট্রেনটিও একটু নড়ে উঠলো যেন। স্তন মুখে পোরার সুযোগ পাচ্ছে না, বাচ্চাটির গলা ফাটা চিৎকার ট্রেনের হুইশলকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এখনও অনেকটা বাকি। তিনজন তিনজনকে স্পর্শ করে ছুটছে একটা বৃহৎ শরীরের মতো। যে শরীরে তিনটে মুখ, তিনটে পেট, তিনটে পায়ু, ছটা পা, দুটো চোখ, একটা মাথা, দুটো হাত......
Biplab Das
18-06-19
No comments:
Post a Comment