Monday, August 15, 2011

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পশুবলি


মানভুমের জেলাগুলিতে মনসা পুজোয় পশুবলি সেরকম কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা নয়। হাজার হাজার মনসার থানে লাখে লাখে পাঁঠা, ভেড়া, মুরগি, হাঁস বলি দেওয়া হয়ে থাকে। সমস্যাটি সৃষ্টি হল অন্য জায়গায়। গঙ্গাজলঘাটি থানার সারাংগপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে পশুবলি কেন হবে এই প্রশ্ন নিয়ে যুক্তিবাদী সমিতির তরফ থেকে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দেওয়া হয় ১ আগস্ট ২০০৯। সাথে সাথে পশুবলি বন্ধ করে ভারতীয় আইনকে মান্য করার অনুরোধও জানানো হয় ওই চিঠিতে। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয় নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, গঙ্গাজলঘাটি থানা, গঙ্গাজলঘাটির বিডিও, বাঁকুড়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শককে। চিঠি পাওয়া মাত্রই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রামের ষোলোআনার মাতব্বরদের সাথে আলোচনায় বসে। রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট সেই মাতব্বরদের রায়, পুজো এবং পশুবলি যেমন হচ্ছিল তেমনই হবে কোন নড়চড় হবেনা। গত কয়েক বছরে ওই এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমিতির ভালোই বেসতৈরি হয়েছিল যার ফলে গাঁয়ের যুব সম্প্রদায়ের একাংশ পশুবলির বিপক্ষে। কিন্তু প্রতাপশালী মোড়ল শ্রেনীর রক্তচক্ষু প্রদর্শনের কাছে তারা নেহাতই শিশু। যুক্তিবাদী সমিতির তরফ থেকে থানায় যোগাযোগ করা হলে থানা জানিয়ে দেয় তারা এ বিষয়ে কিছু করতে অপারক। বেশ, ধরা হল এলাকার উদ্যোগী বিডিওকে। বিস্তর আলোচনার পর বিডিও সাহেবও পিছপা হলেন। বিদ্যালয় পরিদর্শক, গ্রাম পঞ্চায়েত সর্বত্রই চালাকি করে পিছলে যাওয়া উত্তর। একটি বে-আইনী এবং সামাজিক অপরাধ বন্ধ করতে প্রশাসনের দরজায় দরজায় বারে বারে হত্যে দেওয়ার পরেও যুদ্ধটি শেষ হল একরাশ হতাশাকে সম্বল করে। বিদ্যালয়ে পড়তে আসা কচি মন আবার তাদের পাঠস্থানে দেখল রক্তের হোলি খেলা।



২০১০ সালে মনসা পুজোর আগে আগে দেখা গেল আরও দুটি বিদ্যালয়-১)মালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ২) মনসা বিদ্যাপিঠ এ পশুবলি হয়। এই দুটির অবস্থানই বাঁকুড়া শহরে। মনসা বিদ্যাপিঠে ক্লাশরুমের মধ্যেই হাঁড়িকাঠের ফ্রেম নির্মান করা আছে। বিষয়টি জানানো হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এমনকি রাজ্যপাল পর্যন্ত। বিদ্যালয়ে বলি বন্ধের আবেদনে কয়েকশো মানুষের ইন্টারনেটে করা স্বাক্ষর পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, কিন্তু প্রাক ভোট পর্বে তারা এদিকে তাকাবার প্রয়োজন মনে করেননি।



কিছুদিন আগে তথ্য জানার অধিকার আইন’- এ বাঁকুড়া জেলার জন তথ্য আধিকারিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বছর দুয়েক আগে ২০০৯ সালের ১ আগষ্ট গঙ্গাজলঘাটি থানার সারাংগপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে পশুবলি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে যে আবেদন করা হয় এই দু বছরে সে নিয়ে প্রশাসনের তরফে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানান। জবাব এল। জবাবে দেখলাম ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজের চাকরি বাঁচাবার মত করে একটি উত্তর দিয়েছেন।



এবছরও যেন বিদ্যালয়ে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে পশুবলি না হয় তার অনুরোধ করে গত ১৫ জুলাই ২০১১ তে চিঠি দেওয়া হয় বাঁকুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানকে। কপি দেওয়া হয় বিদ্যালয় পরিদর্শক, জেলা শাসক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত। আজ, অর্থাৎ ৬ আগষ্ট অবধি শুধু মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছে যাতে জানা যাচ্ছে উনি সংশ্লিষ্ট সহ বিদ্যালয় পরিদর্শক কে ব্যাপারটি সম্বন্ধে বিশদ খোঁজখবর নিতে বলেছেন।



তন্ত্রে বলা হয়েছে, দেহস্থ আত্মা উষ্ণ শোনিতের দ্বারা সঞ্জীবিত থাকেন; শোনিত ঠান্ডা হইলে আত্মাকেও দেহ ত্যাগ করিতে হয়; সুতরাং আত্মাকে ভোগ দিতে হলে উষ্ণ শোনিতই সর্বোৎকৃষ্ট ভোগ। মুন্ডমালাতন্ত্র ও বৃহৎসারতন্ত্রে আছে, শক্তির উদ্দেশ্যে ছাগ বলি দিলে বাগ্মী হয়, মেষ বলি দিলে কবি, মহিষ বলিতে সম্পদ বৃ্দ্ধি, মৃগ বলি দিলে মোক্ষফল ভাগী হওয়া যায়, গোধিকা বলি দিলে মহাফল লাভ করা যায়, নরবলি দিলে মহাসমৃদ্ধি লাভ হয়, অষ্টসিদ্ধির অধিকারী হওয়া যায়। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, সৌর এবং গাণপত্য-হিন্দু ধর্মের এই পাঁচটি ধারার মধ্যে কেবলমাত্র শাক্তদের মধ্যে বলির রেওয়াজ আছে। ভারতীয় ইসলামীদের মধ্যে শিয়া এবং সুন্নি দুই সম্প্রদায়ই বকরিদের সময় গরু, উঁট, দুম্বা কুরবানি দেয়। ধর্মের ধ্বজাধারীরা প্রচার করে থাকেন, ধর্মীয় কারনে পশুবলি দিলে মানসিক শক্তির বিকাশ হয়। তারা যুক্তি রূপে টেনে আনেন তন্ত্রের কথা। অথচ পুজোর নামে এই নৃশংস প্রথা কোনো ভাবেই মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করেনা বরং দুর্বল এবং অবলা প্রানীদের যে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় এতে খুনী মানসিকতার জন্ম নেয়। বিশেষত শিশুমনে বলিপ্রথার কু প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ থেকে মানসিক রোগ, ভীতি, হিংস্রতা বৃদ্ধি, নিদ্রাহীনতা হতে পারে। সারা পৃ্থিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের এমনটাই অভিমত। আমাদের আলোচ্য বিদ্যালয়টির শিশুগুলি মনের ওপর কি ঘটছে তা সহজেই অনুমেয়।



এখন দেখা যাক ধর্মীয় কারনে পশুবলির বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন কি বলছে?



The prevention of cruelty to animals act, 1960 অনুসারে, প্রকাশ্যে পশুবলি নিষিদ্ধ। কোন প্রত্যক্ষদর্শী ওই বলির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানালে মন্দিরের পূরোহিত সমেত পূজো কমিটির কর্মকর্তা ও বলি দানে অংশগ্রহনকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। আবার Wild life protection act অনুসারে যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী প্রানী হত্যা দন্ডণীয় অপরাধ। জেল এবং জরিমানা দুটোই হতে পারে। Public nuisance act অনুসারে কোনো ব্যক্তির চোখের সামনে বলি দেওয়া যায় না।



ভাবলে অবাক হতে হয়, পশুবলির বিরুদ্ধে এতগুলি জোরালো আইন থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে দুর্গা, কালি, মনসাপুজো, ইদের কুরবানীর সময় কত কত পাঁঠা, ভেড়া, গরু, উঁট নির্বিচারে বলি দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উঁটের মত একটি বিরল প্রজাতির প্রানীকে কুরবানির সময় অকারনে হত্যা করা পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। আর দেশের নির্লজ্জ সরকার ধর্মের দোহায় দিয়ে এইসব বে-আইনী প্রথাকে পশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে কদর্য রূপে বলাৎকার করছে। স্বাধীনোত্তর ভারতে কোনোদিনই সরকার আইনগুলিকে বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেনি। এক্ষেত্রে বামপন্থী ডানপন্থী সব শেয়ালেরই এক রা। আমাদের রাজ্যে ৩৪ বছর একটি কমিউনিষ্ট সরকারের শাসন চলার পরেও পশুবলি বন্ধে প্রশাসনিক স্তরের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তাদের জমানায় প্রতিটি থানায় বামপন্থী পুলিশ ইউনিয়নের উদ্যোগে ফি বছর ঘটা করে কালি পুজো হত, যাতে পশুবলিও হয়ে থাকে। গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় কমিউনিষ্ট নেতাদের পরিচালনায় হয়ে থাকা পুজ়োয় শয়ে শয়ে প্রানী হত্যা হয়ে থাকে।



কোনো এক কালে নরবলির প্রচলন ছিল, সতীদাহপ্রথা ছিল। শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই প্রথাগুলি দূর হয়নি, হয়ওনা। জনসচেতনতা এবং কঠোর আইনের সঠিক প্রয়োগে এই কুপ্রথাগুলিকে প্রায় বিদায় নিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ একান্তই জরুরী, যেমন- দূষণরোধ, চোলাইঠেক বন্ধে, ডাইনিপ্রথা রোধ, পশুবলি রোধ ইত্যাদি। আমাদের সরকার সব গুলি ক্ষেত্রেই পরাজিত। উলটে আমাদের মত যে সব সংঘঠন জনসচেতনতার কাজটুকু করতে যায় তারা প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং রাজ্যের শাসক দলের সরাসরি বিরোধীতার শিকার হয়। তবুও আশা ছাড়া যায় না। একবুক আশা নিয়েই বর্ধমানের বিখ্যাত সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ২০০৫ সালে গিয়েছিলাম, যেখানে ৩০০ ওপর পাঁঠা বলি হত সেবার সংখ্যাটি নেমে এসেছিল ২০ টি তে। কমলাকান্ত কালিবাড়ির ২০ টি পশুবলি কমে দাঁড়িয়েছিল ২ টি তে। রক্ষাকালিবাড়িতে কর্তৃপক্ষ পোস্টার দিলেন জনমতের কারনে এবার বলি বন্ধ করা হল। রবীন্দ্রনাথও তো সারাজীবন বলিপ্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। আমাদের জন্যেই লিখে গেছেন বিসর্জনের মত নাটক। শুধুমাত্র ২৫ বৈশাখ আর ২২ শ্রাবনে গদগদ ভঙ্গিতে কবিতা পাঠেই তাঁকে সম্মান জানানো শেষ হয়ে যায়? তাঁর চিন্তাধারাকে সম্মান জানাতে আমরা এটুকু করতে পারিনা?

Saturday, August 6, 2011

‘রবীন্দ্রনাথের জন্য ছুটি দেবই সাফ কথা মমতার’ —— আনন্দবাজার পত্রিকা

গত ৩১ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকার “রবীন্দ্রনাথের জন্য ছুটি দেবই সাফ কথা মমতার” পড়ে কয়েকটি কথা ব্যক্ত করতে চাইছি। কথাগুলি বলার কারন এই যে, যখন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় বেশীরভাগ সংবেদনশীল সাধারন মানুষ মমতা সরকারের প্রশাসনিক তৎপরতাকে প্রশংসার সাথে মেনে নিচ্ছে, সেই সময় এই হঠাৎ পদক্ষেপ রাজধানীর গতিতে ব্রেক কষা হল না কী? তার সাথে দূষ্টু সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোঁচায় তিনি যখন জোর করে বলেন, “রবীন্দ্রনাথের জন্য ছুটি দিতে হলে বার বার দেবেন”- সেটি মমতার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গির সাথে খাপ খেলেও খাপ খায় না প্রশাসনিক এমার্জেন্সির কর্মতৎপরতার সাথে। মমতাদেবী ভুলে যাবেন না, বাম জমানার গয়ংগচ্ছ ঢিলেঢালা ভঙ্গিমা ছেড়ে সরকারি কর্মচারিরা আপনারই দেওয়া ছূটি বাতিলের সার্কুলেশনকে সাদরে মেনে নিয়েছে, তাদের এতদিনের ফাঁকিবাজির অভ্যাস কষ্ট করে নষ্ট করেছে আপনার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি এবং কাজ করার তাগিদের জন্য। তারা এই রবীন্দ্র বাড়াবাড়িকে কী চোখে দেখছে একবারও ভেবে দেখেছেন? কেন্দ্রিয় এবং রাজ্য সরকার গত দেড় বছর ধরে যেভাবে সার্ধ শতবর্ষের নামে লেবু কচলে তেতো করছেন তাতে আমজনতার রবীন্দ্রপ্রীতি কতটা বাড়ছে বলা শক্ত তবে রবীন্দ্রনাথ যে গান্ধীজি, আম্বেদকর, সর্বপল্লী রাধাকৃ্ষ্ণণের মত রবীন্দ্রআদর্শ বিহীন মনীষিতে পরিনত হতে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত। কংগ্রেসের টপ টু বটম কোন নেতা টি গান্ধির অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করে বলুন তো? তারা সবাই ভোটে জেতে পেশীশক্তির জোরে, আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমি দখল করে সেনা নামিয়ে। আম্বেদকর সংরক্ষণ নীতি এমন ভাবে শুরু করেছিলেন যাতে দু তিন দশকের মধ্যে দলিত শ্রেণিরা সমাজের ওপরের দিকে উঠে আসতে পারে। তার মতামত কে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংরক্ষণ নিয়ে ভোট ভোট খেলা খেলছে। প্রতি বছর ঘটা করে শিক্ষক দিবস পালন করেও পেশাগত ভাবে অবনমনের তালিকায় শিক্ষকের স্থান আজ দু নম্বরে, ডাক্তারের পরেই। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ভেবে দেখা উচিৎ, প্রায় প্রতিটি মনীষীরই এরকম অবস্থা, তারা এক বলে গেছেন, করি আমরা উলটো। এটাই আমাদের রেওয়াজ, এটাই আমাদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা হলাম বিশ্ব আঁতেল। রবীন্দ্রনাথের গান গাই, পদ্য বলি ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, চোখ বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে। আসলে আমরা মুখস্ত বলি। আত্তীকরন করিনা। করলে এত অপকর্ম আমাদের দ্বারা হত না।
এই পরিবর্তনের সময়ে আপনি যদি ভাবতেন যে, রবি ঠাকুর বলে গেছেন- “সমবায় প্রনালীতে জীবিকানির্বাহই আমাদের দেশকে দারিদ্র্য বাঁচাবার একমাত্র উপায়…………শুধু আমাদের দেশ কেন পৃ্থিবীর সকল দেশেই এই প্রনালী একদিন বড় হইয়া উঠিবে”। তাহলে এক কাজ করা যাক, রবি ঠাকুরের সমবায় চিন্তার যে যে দিকগুলি একবিংশ শতাব্দীতেও প্রযোজ্য সেগুলি প্রয়োগ করে কোটরে ঢুকে যাওয়া কুটির শিল্প এবং সমবায় দপ্তর কে ঢেলে সাজাই। রবি ঠাকুর যেহেতু বলেছেন “ ধনের পুজা প্রবল হয়ে উঠেছে………ধনলোভের মত এমন নিষ্ঠুর এবং অন্যায়পরায়ণ প্রবৃত্তি আর নেই”। তাহলে সামনের মরসুমে পাঠশালা থেকেই তার এরকম কোটেশন গুলি ছাত্রছাত্রীদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। বিশ্বকবির বিখ্যাত ‘রাজর্ষি’ কে সম্মান দিয়ে অন্তত ধর্মের নামে নির্বিচারে হাজার হাজার পশুবলি বন্ধ করা যেত। কিছু না পারলেও বাঁকুড়া জেলার যে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোট ছোট শিশুদের সামনে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে ঝপাঝপ বলি হতে থাকে সেই বীভৎসতা বন্ধ করার প্রজেক্ট নেওয়া যেত। জানেন কি হাজার প্রতিবাদ সত্বেও ঐ বিদ্যালয়গুলির কমিটি এবছরও পয়লা ভাদ্র পশুবলি করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপনার জানার কথা কেননা প্রশাসন কে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তার কপি আপনাকেও দেওয়া হয়েছে। জানিনা কচি মন গুলির চোখের সামনে যখন রক্ত-লীলার হোলি হবে তখন আপনি রবি ঠাকুর নিয়ে কি প্ল্যান করবেন। রবীন্দ্রনাথের দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর কে স্লোগান করে আগামী পাঁচ বছরের বৃক্ষ রোপনের একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা যেত না কী? বাম জমানায় শুয়ে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা কে রবি ভাবনায় শিক্ষিত করার প্রজেক্ট নেওয়া যায় নিশ্চয়?
রবীন্দ্রনাথ কেন যে কোনো মনীষী কেই সম্মান জানানো যায় তার চিন্তা, তার আদর্শ, তার স্বপ্নকে পূর্ণ করার মাধ্যমে। তাকে নিয়ে হাজার নাচানাচি বা আঁতলামোর মাধ্যমে নয়।