Wednesday, August 15, 2012

যুক্তিবাদী সমিতির ডাইনিপ্রথা বিরোধী কাজকর্মের ওপর আলজাজিরা টিভির তথ্যচিত্র


    গত ৪ এবং ৫ আগষ্ট পুরুলিয়া জেলায় এসেছিলেন তথ্যচিত্র পরিচালক অর্ল্যান্ডো গুজম্যান। তারা কিছুদিন হল যুক্তিবাদী সমিতির ডাইনিপ্রথা বিরোধী কাজকর্মের ওপর আলজাজিরা টিভির হয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মানে হাত দিয়েছেন। আগষ্ট মাসের শুরুতে পুরুলিয়া জেলায় যুক্তিবাদী সমিতির অনুষ্ঠানসূচীতে দুটি উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল। ৪ তারিখ কপড়রা গ্রামে যুক্তিবাদী সমিতির কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান অলৌকিক নয়, লৌকিক এবং ৫ তারিখে একজন ওঝার ভান্ডাফোঁড়। অর্ল্যান্ডো এবং তার ভারতীয় সাথী বিবিসি নিউজের কল্পনা প্রধান সিদ্ধান্ত নিলেন, এই দুটি অনুষ্ঠানই সরাসরি ক্যামেরাবন্দী করে রাখবেন।
      মানবাজার ১ নম্বর ব্লকের একেবারে পশ্চিমপ্রান্তের গ্রাম কপড়রা, যেখানে গত ২৮ মে,২০১২ লক্ষীমণি কিস্কু নামের এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদে অত্যাচার শুরু করে গ্রামের মাতব্বরেরা, জরিমানা ধার্য্য হয় ৫০ হাজার টাকা, অনাদায়ে অবধারিত কুপিয়ে খুন। ওই মহিলার ওপর অত্যাচার শুরু হয়েছে, এমনকি জরিমানার টাকা না দিতে পারলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে শুনেই ওইদিন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলার সদস্যরা রাত প্রায় ১১ টা নাগাদ ওই গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়। সেদিনও সাথে ছিল তথ্যচিত্র নির্মাণকারীদের দলটি। সারা রাত ধরে বিভিন্ন ঝামেলার পর সকালে অবস্থা কিছুটা শান্ত হয়, পুলিশ ততক্ষণে গ্রামে এসে কয়েকজনকে তুলে নিয়ে গেছে। পরদিন বিকেলে নিরাপত্তার খাতিরে লক্ষীমণিকে তার বাবার বাড়ি বোরো থানার ঝগড়ুডিহ গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়।
    এরপর যুক্তিবাদী সমিতি ওই গ্রামে জুলাই মাসে দু-দুবার কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান করে। দু বারই ওই ব্লকের বিডিও শ্রী সায়ক দেব হাজির ছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে আশানরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। তা সত্বেও হার না মেনে আমরা ৪ তারিখের অনুষ্ঠানের জন্য ওই গ্রামটিকেই বেছে নিয়েছিলাম কারন আমরা জানতাম মানুষ একদিন না একদিন সঠিক বুঝবেই।
    অনুষ্ঠানের তিন দিন আগে থেকেই কপড়রা গ্রামকে কেন্দ্র করে থাকা মহাড়া, বামুনঝোড়, ফুলঝোড়, পুনরুর মত সাত আটটি গ্রামে ব্যানার, পোস্টার, মাইকে ঘোষনা ইত্যাদির মাধ্যমে কপড়রার মাঠে অনুষ্ঠানের ব্যপারটি ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হয়েছিল। সমিতির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাত তিনদিন ধরে একনাগাড়ে ওই গ্রামে ঘাঁটি গেড়ে পড়ে ছিলেন। ফলে দর্শকের সংখ্যা হল বিপুল । আশেপাশের বহু গ্রাম থেকে প্রায় হাজার তিনেকের মত দর্শক পায়ে হেঁটে বা সাইকেল, মোটর সাইকেল, ট্রাক্টরে চেপে এসে মাঠ ভরিয়ে তুললেন। যে কপড়রার মাঝি মোড়লদের ভয়ে গ্রামবাসীরা এতদিন কুসংস্কার মুক্তির অনুষ্ঠানকে বয়কট করার কথা ভাবছিল, তাদের অনেকেই এখন অন্যান্য গ্রামের লোকেদের দেখাদেখি এই অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার কথা ভাবল। মাঝি-মোড়লদের চোখ রাঙানি যুক্তিবাদী আবেগের স্রোতে খড়কূটোর মত ভেসে গেল। তারা সেখানে দেখল, তান্ত্রিক-গুনীনদের আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটার কৌশল কিম্বা আগুন খাওয়ার পেছনের রহস্য। কিভাবে মড়ার খুলি দুধ খেতে পারে- স-অব হাতে কলমে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া হল তাদের। ওঝা-সখা-জানগুরুদের ডাইনি সাবস্ত্য করার হরেক রকম কৌশলও সর্বসমক্ষে ফাঁস করে দেখানো হল সেখানে। যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে দুধে খরিশ, কালো খরিশ, ময়াল, বালি বোড়া ইত্যাদি সাপ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই সাপগুলি দেখিয়ে বিষধর সাপের সাথে নির্বিষ সাপের পার্থক্য, সাপের বিষ দাঁত, বিষ থলি, সর্পদংশনের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা, বিষ ঝাড়তে ওঝাদের বুজরুকি ইত্যাদি সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণণা দেওয়া হল। সমগ্র অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ব্লকের বিডিও শ্রী সায়ক দেব, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যরা। কপড়রা সহ আশে পাশের গ্রামবাসীরা শপথ নিলেন কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে আর গ্রামের নিরপরাধ ব্যাক্তিদের ডাইন বা ডাইনি অপবাদ দেবেন না।
অনুষ্ঠান শেষে কপড়রা গ্রামের অধিবাসীদের সাথে ফের আলোচনায় বসা হল লক্ষীমণি কিস্কুর বিষয়টি নিয়ে। তখন সন্ধ্যে নামতে চলেছে। গ্রামবাসীরা লক্ষীমণি কে নিয়ে স্পষ্টতই দুভাগে বিভক্ত। দীর্ঘ দু ঘণ্টা ব্যাপী উত্তপ্ত আলোচনা এবং প্রবল বাদানুবাদের পর সকলে একমত হল লক্ষীমনি এবং তার পরিবারকে গ্রামবাসীরা মেনে নেবে। গ্রামে যাওয়া থেকে শুরু করে সারা দিনের সমস্ত কিছুই আলজাজিরার ক্যামেরা বন্দী হয়ে থাকল।
     পরদিন, অর্থাৎ ৫ আগষ্টের সকালে পুরুলিয়ারই পাড়া থানার লিপানিয়া গ্রামে যুক্তিবাদী সমিতির ২২ জন সদস্য হানা দিল গুনীন অভিরাম মাহাতোর আস্তানায়। অভিরামের বাড়ির কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকজন, বাকিরা মোটর বাইকে গ্রামের সীমানা বরাবর। অভিরাম রোজের মত সেদিনও তার কাছে আসা দর্শনার্থীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কাউকে তেল পড়ার নিদান দিচ্ছেন তো কাউকে জলপড়া। একটি জল ভর্তি থালাতে চাল ছড়িয়ে ভেসে থাকা চালের অবস্থান গুনে বলে দিচ্ছেন কোন গ্রামের কে ডাইনি বা কার সমস্যার কী সমাধান। দর্শনার্থীর লাইনে ভক্ত সেজে থাকা যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য বঙ্কিম মুর্মু সস্ত্রীক এগিয়ে গেলেন। বঙ্কিমের স্ত্রী কৌশল্যার সন্তানাদি হয়নি শুনে তিনি আবার জলে চাল ছড়িয়ে গুনে টুনে বললেন, ডাইনের কারনেই এমনটা হচ্ছে। এখন সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ততক্ষণে দর্শকের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা বঙ্কিম-কৌশল্যার দুই বাচ্চা ছুটে এসেছে মা বাবার কোলে। অভিরাম বেকায়দায়। মরিয়া অভিরাম তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে রক্তচক্ষু প্রদর্শন শুরু করাতেই ভিড়ে মিশে থাকা যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যরা নিজেদের পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করল। খবর পেয়েই গ্রাম ঘিরে থাকা আটটি মোটরবাইকে অপেক্ষারত যুক্তিবাদীরাও তান্ত্রিকের আস্তানায় হাজির। এলাকার নিয়ন্ত্রন চলে এল যুক্তিবাদীদের হাতে। অবশেষে গুনীন তার সমস্ত অপরাধ স্বীকার করলেন এবং ভবিষ্যতে একাজ আর করবেননা বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। লিপানিয়া গ্রামের অধিবাসীদের সামনে অভিরামের বুজরুকি ফাঁস করা হল এবং অভিরামকে নিয়ে তারা কি সিদ্ধান্ত নেন সেটি গ্রামবাসীদের ওপরেই ছেড়ে আসা হল। কোলে দুই সন্তান নিয়ে ক্যামেরার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন বঙ্কিম মুর্মু ও কৌশল্যা মুর্মু।
     এই দুদিনের অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভুমিকায় ছিলেন যুক্তিবাদী সমিতির কাঁটাবেড়া শাখা, আদ্রা শাখা, মানবাজার শাখা, বান্দোয়ান শাখা, পুরুলিয়া সদর শাখা, বাঁকুড়া সদর শাখা এবং হিউম্যানিষ্টস অ্যাসোসিয়েশনের আদ্রা শাখার সদস্যরা।

Tuesday, April 3, 2012

আরশি বিদ্যুৎ, তুমি -------------- অনিন্দ্য রায়

কিছুদিন আগে কিছু লোকের জঘন্য চক্রান্তে বাঁকুড়া জিলা স্কুলের সুপ্রাচীন শিমুল গাছটি কাটা শুরু হয়েছিল।স্কুলের অনেক মাষ্টারমশায়ের তীব্র আপত্তিতে জলঘোলা হলে শেষ পর্যন্ত চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।ধন্যবাদ সমস্ত মাষ্টারমশাই, সুধী নাগরিক বৃন্দ এবং অবশ্যই নির্মাল্য বাবুকে যিনি  প্রথম এব্যাপারে হল্লা করে ফেসবুক কাঁপিয়ে ছিলেন।
কবি অনিন্দ্য রায় বেশ কয়েকবছর  আগে তার কবিতার বই 'তিরিশে ফেব্রুয়ারি' তে জিলা স্কুল- মাঠ-গাছ-কম্পাউন্ড নিয়ে একটি স্মৃতিসম্বলিত দীর্ঘ কবিতা উপহার দিয়েছিলেন পাঠকদের।সেখান থেকেই আজ এই ব্লগে কিছুটা অংশ তুলে দিলাম। পুরোটা না দিতে পারার খেদ এবং অপরাধ দুইই রয়ে গেল।


আরশি বিদ্যুৎ, তুমি



.

নীচু ছিল মেঘ সেই বনে

  বিরহের গাছ কিছু হলে

    এরমইতো হত মনে

      হয়



সেই বন ছিল আগে হাতের নাগাল

     ইহকাল

          এরমইতো হত



শনিবার ছুটি হলে স্কুল

বনে গিয়ে পাতা কুড়িয়েছি

   নীচু মেঘ লাগত মাথায়

       ভিজে যেত ব্যাকরণ

            বই



এই শনিবার ছুটি হলে

এরমইতো হত মনে হয়



.

যখন গুনতে পারতাম ফাল্গুনের হাড় কেউ আমার জন্য কিনে

               রেখেছিল সমীকরণের মত একটা চাদর

তা ছাড়া সে সব দিনের কথা মনেই পড়ত না

তখন কি ব্যান্ডপার্টি ছাড়া দেখা করতে আসত না গাঁদাফুল

                             নামের মেয়েটি ?

তা ছাড়া সে সব দিনের পিঠে চাবুকের দাগ ছিল বলে

                      অঙ্কগুলো উত্তরে মিলে যেত

যুক্তাক্ষর ছাড়াই একটার পর একটা রঙের নাম বলতে পারতাম

যতক্ষণে দম না ফুরোয় - সেই প্রথম ফুরিয়ে যাওয়ার শুরু -

একটা মাত্র চাদর, তার ওপর কত সহজেই মিশে গেছে ঘুম

কেবল দিনের বেলা সে সব কথা মনেই পড়ে না

যখন লিখতে পারতাম ফেব্রুয়ারির চরিত্র আমার লম্বাটে খাতায়

কেউ বুলিয়ে দিয়েছিল খয়েরি রবার, আর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম

নয়তো এখনো খেলতে পারতাম ছায়াগুলোর সাথে ?



.

বারান্দায় পোষাকগুলো ঝুলছে আর রাস্তার লোক

               পোষাক দেখে ভাবছে আমার কথা

ঘরে আঁশরঙা ঘুমের ভেতর শুয়ে আছি

পোষাকগুলো আমার মত হাওয়ায় দুলতে দুলতে

....................................

..................... (তিরিশে ফেব্রুয়ারি / অনিন্দ্য রায় ;   প্রকাশকঃ এখন বাংলা কবিতার কাগজ ও জার্নি 90s)

Friday, March 23, 2012

আন্তর্জাতিক নারী দিবস- একটু অন্যভাবে ভাবুন।


আন্তর্জাতিক নারী দিবস- একটু অন্যভাবে ভাবুন।

                                                             

                                                 

                        পাঁচ বাড়ি বাসন মাজে যে মহিলা ,

                                                             তাকে বলি এবার স্বাধীনতার

                                                             পঞ্চাশ বছর। জানো?

                                                             ব্যাজার রাগ রাগ মুখ করে মহিলা বলল,

                                                              তার এখনও দু বাড়ি কাজ বাকি।

                              (এই দিনগুলো/ ব্রত চক্রবর্তী )



দেখে ভালো লাগে কত কত গৃহবধু ছাপোষা জীবন ছেড়ে নতুন কিছু করার উদ্দ্যেশ্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পথে নামেন হাজার সেমিনারের লাখো বক্তৃতায় প্রেক্ষাগৃহগুলি গমগম করে সেদিন তাদের আবেগ, পরিশ্রম, সংগ্রামী মানসিকতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং সহানুভুতি থাকলেও নারী আন্দোলনের কিছু পুরো ব্যাপারটিই কিছু মৌলিক প্রশ্নের সামনে এসে যায়

     হিন্দু-মুসলিম-খ্রীষ্টান যে ধর্মের দিকে তাকাই না কেন দেখতে পাবো সেখানে নারী রয়েছে দাসের ভুমিকায় আর পুরুষ প্রভুর মনুর বিধান হিন্দুদের এক অলঙ্ঘনীয় বিধান সেখানে চোখ রেখে দেখুন, পাবেন-

“পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্তা রক্ষতি যৌবনে

রক্ষন্তি স্থবিরে পুত্রা না স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যহর্তি ।।

(মনুর বিধান ৯/৩)

অর্থাৎ নারীকে পিতা রক্ষা করবে কুমারী কালে,স্বামী যৌবনকালে, বার্ধক্যে পুত্ররা, স্ত্রী মানুষ স্বাধীনতার যোগ্যই নয় মনুসংহিতার ২/৬৭ তে আরও আছে যে,

বৈবাহিক বিধিঃ স্ত্রী নাং সংস্কারো বৈদকঃ স্মৃতঃ

পতিসেবা গুরৌবাসো গৃহার্থোহাগ্নি পরিক্রিয়া ।।

     কি বুঝলেন প্রিয় পাঠক পাঠিকারা ? আপনি হিন্দু হলে আপনাকে মানতেই হবে যে, বিয়েই নারীর বৈদিক উপনয়ন, পতিসেবা হল সারা জীবন গুরুগৃহ বাসের সমান, আর গৃহকর্মই হল হোমস্বরূপ অগ্নিপরিচর্যা যে সমস্ত মহিলারা একই সাথে ফেব্রুয়ারি মাসে শিবরাত্রি করেন আর মার্চে নারীদিবসে গলা ফাটান তাদের বলি শুনুন, মনু বলেছে ( ৫/১৫৪)- পতি সদাচারহীন, পরস্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্কযুক্ত বা গুণহীন হলেও সতী স্ত্রী সেই পতিকে দেবতার মতই পূজা করবে

      হিন্দুধর্মের সর্বত্র পুরুষের লাম্পট্য, অত্যাচার, শাসন কে পদে পদে স্বীকার করা হয়েছে, বাহবা দেওয়া হয়েছে তৈত্তীরিয় সংহিতায় (৬/৬/৮/৫) বলা হয়েছে- “ যজমান দীক্ষার দিনে গণিকা সাহচর্য বর্জন করবেন, তারপরদিন পরস্ত্রীর সাহচর্য এবং তৃ্তীয় দিন নিজ স্ত্রীর সাহচর্য বর্জন করবেন” অর্থাৎ দীক্ষার দিনেও পরস্ত্রীর সাহচর্য করার অনুমতি আছে দীক্ষার দিন ছাড়া অন্যান্য দিনে গণিকার কাছে যাওয়ার নিষেধ নেই আসলে গণিকা বা পরস্ত্রীর সাথে বিছানায় ওঠাকে হিন্দু ধর্ম কোনো দিনই নিষেধ করেনি বরং বেশ তোল্লায় দিয়েছে মনুসংহিতা এবং পুরাণ অনুযায়ী হিন্দু দেবতাদের  জন্ম, তাদের নারীলোলুপতা, নারীসঙ্গের যে বর্ণনা পাই তা যে কোনো পর্ণোগ্রাফির গল্পকেও হার মানাবে পৃথিবীর বড় বড় ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে ইসলাম এসেছে সবার পরে, অর্থাৎ সবচেয়ে আধুনিক তবু দেখা যায় নারী দমনে তার কাছে অন্যান্য ধর্মমতগুলোও হার মেনে যায় কোরাণে আছে (সুরা নিসা ২২৩), “স্ত্রী তোমাদের শস্য ক্ষেত্র তাই তোমাদের শস্য ক্ষেত্রে যেভাবে খুশি প্রবেশ করতে পারো” মুসলিম শরিয়া আইন তো ভয়ঙ্কর একজন স্বামী তার একগুচ্ছ স্ত্রীদের ওপর যখন তখন যৌন অধিকার ফলাতে পারে- যা ধর্ষনেরই নামান্তর স্বামীর অধিকার আছে কোনো কারন না দেখিয়ে শুধুমাত্র তিনবার তালাক শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে যখন তখন স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেওয়ার কেনিয়া, ঘানা, সোমালিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া, সুদান সহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে খৎনা প্রথা কি নির্মম কি ভয়ঙ্কর স-অব এসেছে ধর্মের হাত ধরে খৎনার সময় বালিকার চিৎকার ঢেকে রাখতে আশেপাশের মহিলারা সুর করে গাইতে থাকে “আল্লা মহান, মহম্মদ তার নবী; আল্লা আমাদের সমস্ত পাপ থেকে দূরে রাখুক” মুসলিম নীতিনির্দেশক গ্রন্থ হাদিশে রয়েছে “নারী শয়তানের রূপে আসে আর শয়তানের রূপে যায়” অবশ্য নারীদের চুড়ান্ত ভাবে  অপমান করতে হিন্দুরাও কম যায়না মহাভারতের অনুশাসন (৩৮)পর্বে চোখ রাখলেই পাবেন, “ তুলা দন্ডের একদিকে যম, বায়ু, মৃত্যু, পাতাল, বাড়োবানল, ক্ষুরধার বিষ, সর্প ও আগুন কে রেখে অপরদিকে নারীকে স্থাপন করলে ভয়ানকত্বে উভয়ে সমান সমান হবে” কোথাও কোথাও নারীদের জোঁকের সাথে তুলনা করা হয়েছে তো কোথাও লাঠ্যৌষধ দেওয়ার কথাও বলা আছে

      ভারত রাষ্ট্রের আস্তিনে ঢোকানো তুরুপের তাস বিবেকানন্দও যে নারী প্রগতির আন্দোলনে বাধা দিয়েছেন। তিনি বরাবর সতীদাহ প্রথার পক্ষে ছিলেন, বিধবাদের পূনরায় বিবাহ পছন্দ করতেন না, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। যদিও বিবেকানন্দের কর্মজীবনের অর্ধশতাব্দী আগেই রামমোহন সতীদাহ বন্ধে ব্রতী হয়েছিলেন, বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ চালু করেছিলেন, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ রোধের জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। হ্যাঁ। এটাই সত্যি। বিবেকানন্দের নিজের লেখা বই, পত্রাবলী পড়লেই বেরিয়ে আসে সত্যি টা। আসলে তিনি পুরুষতান্রিক সমাজের আর পাঁচটা সমর্থকের মতই ছিলেন, যারা চায়- নারীরা শিক্ষায় দীক্ষায় পুরুষদের সমকক্ষ হতে সচেষ্ট না হয়ে, মানুষ না হয়ে, নারী হিসেবেই তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করুক। নারীর শিক্ষা হবে একটি খন্ডিত মানুষে পরিণত হওয়ার শিক্ষা। যে শিক্ষা আবর্তিত হবে গৃহকর্ম, রন্ধন, সেলাই, সহ্যগুণ, লজ্জা, সেবা, আচার ইত্যাদি বিষয়ে উৎকর্ষতা লাভের মধ্য দিয়ে। হে হিন্দু ফেমিনিষ্টরা দ্বিচারিতায় ভুগবেননা, যেকোনো একদিকে যান

      তবে, শুধু কি নারীই শোষিত? নাকি নারীকে দমন করছে যে পুরুষ, সেও তার সমাজের কাঠামোর প্রেক্ষিতে একই ভাবে শোষিত হচ্ছে না? ক্ষমতা যার হাতে সেই শোষন করতে পারে। তাই আমরা দেখেছি যে কোনো নারীই যখন ক্ষমতার পিরামিডে ওপরের দিকে বসেছে তখন সেও একই ভাবে মেতেছে শোষণ খেলায়। ইন্দিরা গান্ধি থেকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, প্রিন্সিপ্যাল মিস পাকড়শী থেকে কমলার মা- তাকিয়ে দেখুন একবার। রাজনীতি,দুর্নীতি,সৌন্দর্য্য,যশ,অর্থ- ক্ষমতার উৎস অনেক কিছুই হতে পারে। স্বাধীনতা হরণ হচ্ছে মানুষের। যার অর্ধেক পুরুষ, অর্ধেক নারী। তাই আমাদের মত দেশে স্বাধীনতাহীনতার সমস্যাটি শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও, যাদের সিংহভাগ কোনও না কোনও ভাবে স্থূল অর্থেই পরাধীন। যেসব লেখক, বুদ্ধিজীবি,ও সমাজ বিজ্ঞানীরা আজ নারী স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেছেন তারা জানেন নারী স্বাধীনতা নিয়ে কলম চালানো নিরাপদ, সাথে উপরি পাওনা প্রগতিশীলতার তকমা। কিন্তু দেশের মানুষের সার্বিক স্বাধীনতার প্রশ্নে সরব হলে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুললে ধনিক শ্রেণি, তাদের পাপোশ সরকার, পুলিশ-প্রশাসনের সক্রিয় বিরোধিতার সামনা সামনি পড়তে হবে, রাষ্ট্রের তল্পিবাহক প্রচারমাধ্যমগুলি ব্ল্যাক আউট করবে, এসব অবধারিত বলেই তারা দেশের মানুষের সার্বিক স্বাধীনতার প্রশ্নটি নিয়ে আশ্চর্য রকম নীরব থাকেন। তাদের প্রায় সবাই ঝালে ঝোলে অম্বলে থাকাটাই পছন্দ করেন। তারা নারী দমনের অন্যতম হাতিয়ার বলে ধর্ম কে আঘাত করতে চাননা। কারণ তারা বরাবরই রাষ্ট্র নামক সিস্টেমটির কাছে প্রগতিশীল থাকতে চান। আন্দোলনকারীরা ভাবতে বসেন না, এতদিন নারীদের দমিয়ে রাখার ফলে যেমন লিঙ্গের ভিত্তিতে সমাজের অর্ধেক মানুষ বিভক্ত বিভক্ত ছিলেন, পিছিয়ে ছিলেন চিন্তায়-চেতনায়। তেমনি নারীবাদী আন্দোলনের গতিমুখ অনেকাংশেই পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে পড়লে নারী-পুরুষের বিভেদটি রয়েই যাবে, যাতে লাভ হবে ক্ষমতার শীর্ষে বসে থাকা শোষকদেরই।

      নারী আন্দোলনে থাকব এবং মনে প্রানে হিন্দু বা মুসলিম বা খ্রীষ্টান থাকব, শিবের মত বর পাওয়ার জন্য শিবরাত্রি পালন করব এও যেমন হয়না তেমনি নারী আন্দোলনকে শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে শোষিতদের আন্দোলনের বাইরে গিয়ে ভাবাটাও মুর্খামির পর্যায়ে পড়ে কেননা ধর্মের ভিত্তিতে, জাতপাতের ভিত্তিতে, বর্ণের ভিত্তিতে যে বিভাজন চলে সেই বিভাজনেরই একটি অংশ হল লিঙ্গের ভিত্তিতে বিভাজন মানুষ এভাবে যতই বিভাজিত হতে থাকবে ততই শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শোষিতদের ক্ষুব্ধতা, প্রতিরোধ, সংগ্রাম ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হতে হতে অণু পরমাণুতে পরিনত হবে



কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

১)যুক্তিবাদের চোখে নারীমুক্তিঃ প্রবীর ঘোষ

২)নারীঃ হুমায়ুন আজাদ

৩)আনন্দবাজার পত্রিকা

৪) স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনা (পঞ্চম খন্ড)

৫) এই দিনগুলোঃ ব্রত চক্রবর্তী

Monday, January 23, 2012

জারোয়া নাচ এবং ভারত সরকার


আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জের গভীর অরণ্যে কিছু পর্যটক খাবারের বিনিময়ে নগ্ন জারোয়াদের নাচ দেখছে এবং এসবের আয়োজন করেছে কিছু পর্যটন সংস্থা, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও সেনা- এরকমই অভিযোগে উত্তাল আন্দামান প্রশাসন এবং মিডিয়াকুল। মিডিয়া এও বলছে আন্দামানে এই হিউম্যান সাফারি নাকি বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। এধরনের অভিযোগে যেখানে কেন্দ্রিয় সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হয়া উচিৎ, সেখানে আন্দামান প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিতে চাইছে। এমনকি, যে প্রথম এই নাচের ভিডিও ফুটেজটি তুলেছিল এবং মিডিয়াকে দিয়েছিল তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছে। এটা নিজেদের দোষ ঢাকতে অন্যদিকে পাবলিকের মন্যগ ঘোরানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।

     নগ্ন হিংস্র জারোয়ারা আজ কমতে কমতে মাত্র ২৪০ জনে এসে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা টুকুও কতদিন থাকবে বলা যায়না। দীর্ঘ বছর ধরে মনোবিদ, সমাজবিদদের দ্বারা ওদের পাল্টানোর চেষ্টা করলে আজ হয়তো সমাজের মূলস্রোতে আনা যেত। তা না করে ওদের নাচ দেখিয়ে বিদেশি পর্যটকদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা? ছি।