Saturday, October 22, 2011

GLOBAL WARMING


my book- GLOBAL WARMING published by DEY'S PUBLISHING, 13 BANKIM CHATERJEE STREET, KOLKATA. ph-033 22412330

Monday, September 12, 2011

THE BENGALI FILM 'CHATRAK' AND PAOLI-ANUBRATA'S NACKED BED SCENE

         ‘ছত্রাক সিনেমায় সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় পাওলি দামের বিছানা দৃশ্যে অভিনয় করার ঘটনায় এপার-ওপার দুই বাংলারই তামাম মিডিয়া গোষ্ঠী উত্তেজনায় ফুটছে। আনন্দবাজার পত্রিকা প্রথম পাতাতেীই নিউজটি কভার করল তো চ্যানেল টেন শুরু করল রতিকলার ফুটেজ দেখাতে। এ পত্রিকা বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়। বাচ্চা থেকে বুড়ো-অনেকেই ইন্টারনেটে ইউটিউব খুলছে বাংলা সিনেমার নায়িকার পর্নো সিন দেখতে।

      ১১ সেপ্টেম্বর, রবিবার, বাঁকুড়ায় যুক্তিবাদী সমিতির সাপ্তাহিক স্টাডিক্লাশের প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সিনেমা ছত্রাক। ঘটনাচক্রে এই দিনটি হিউম্যানিষ্টস অ্যাসোসিয়েশনের দশম প্রতিষ্ঠা দিবসও। শ্রীলঙ্কার পরিচালক বিমুক্কি জয়াসুন্দরের এই দ্বিভাষিক ছবিটিতে নায়িকার ভুমিকায় অভিনয় করেছেন পাওলি দাম। বিতর্ক শুরু হয়েছে ছবির একটি দৃশ্য নিয়ে যেখানে দেখা যায় যে, নায়িকা তার সহ-অভিনেতা অনুব্রতর সাথে ওরাল সেক্সে মত্ত। প্রায় চার মিনিট দীর্ঘ এই ক্লোজ আপ দৃশ্যটিতে পাওলি-অনুব্রত সম্পূর্ণ নগ্ন, একটুও সুতো নেই। টলিউড তো দূর অস্ত, বলিউডও সামনের কয়েকবছরে এরকম সিনে পৌঁছাতে পারবেনা হলফ করে বলা যায়।

            আ্লোচনা জমে উঠেছিল ডাঃ অনিন্দ্য রায়ের অনবদ্য বিশ্লেষন, কবি সুদীপ চট্ট্যোপাধ্যায়ের তথ্যনিষ্ঠ বক্তব্য, এবং সমাজসেবী ভাস্কর সেনের অসাধারণ কনক্লুশনে। সেখানে ছিলেন ঝাড়খন্ড স্টুডেন্ট ফেডারেশনের মুখপাত্র অমরেন্দ্র টুডু, ওই সংগঠনেরই সাগিনা মাহাত, এপিডিআর কর্মী অনিকেত রায়, সমাজসেবী বাপ্পাদিত্য হাজরা, যুক্তিবাদী সমিতির সুধীর হাঁসদা, আমি সহ আরো অনেকে। আলোচনার প্রথম পর্বে আলোচকরা এক বিষয়ে সিদ্ধান্তে এলেন যে, ঐ সিনেমায় পাওলির ওরাল সেক্সের দৃশ্যটি কতটা ন্যাচারাল বা কতটা ভালগার, চিত্রনাট্যের পরিপ্রেক্ষিতে দৃশ্যটির অবতারনার প্রয়োজন ছিল কি ছিল না, ঘোমটার আড়ালে থাকা বাঙ্গালী রমণীকূলের রক্ষণশীলতায় জোর ধাক্কা দিল কি দিল না-এসব নিয়ে আলোচনা করা বৃথা। কেননা কোন্ দৃশ্যকে আমরা ভালগার বলব সেটা আপেক্ষিক এবং ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করে। আর সব ছবির পরিচালকই বলবে এই দৃশ্যটির শৈল্পিক প্রয়োজনীয়তা আছে, তার উদ্দেশ্য যতই না বাজারি হোক। বরং আমাদের আলোচনা হতে পারে এই সিনামাটি নিয়ে মিডিয়া গোষ্ঠীর ভয়ঙ্কর সব মতামত নিয়ে। এ টু জেড সব পত্রিকা্র এক সূর-বাংলা সিনেমা এতদিনে সাবালক হল। পাওলির-অনুব্রতর নগ্নতার দৃশ্যটিকে সবাই বাংলা চলচ্চিত্রের ম্যাদামারা সফরের অন্যতম বাঁক বলে মনে করছে। তাদের ভাবখানা এমন, যেন কয়েকটি থ্রি-এক্স মার্কা পর্নো দৃশ্য থাকলেই সিনেমা হয়ে যায় সাবালক আর তার নায়ক নায়িকারা সাহসী। পাওলি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যদি বিছানায় যৌনতার সময় আমাদের গায়ে কাপড় না থাকে তবে পর্দায় সেই চরিত্রে অভিনয়ের সময় গায়ে কাপড় রাখতে হবে কেন?

       সুদীপ চট্টোপাধ্যায় তুললেন স্তানিস্কোভস্কি থেকে ব্রেখটের কথা। উঠে এল শিল্পের ক্রমবিকাশের প্রসঙ্গ। আর্টস ফর আর্টসসেক এর ধারনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কি ভাবে বদলে যায় আর্টস ফর হিউম্যানসেকে। দেশে দেশে কমিউনিজমের হাওয়া এক্ষেত্রে সদর্থক ভুমিকা নিয়েছিল। অনিন্দ্য রায় বোঝালেন-শিল্প কি? ঘটনাকে অভিনয়ের মাধ্যমে রিয়েলিষ্টিক করে তোলা। গল্প, চিত্রনাট্য,অভিনয়- সবে মিলে দর্শকের সামনে এমন এক ইলিউশ্যন তৈরি হবে যাতে সে সত্যি বলে মনে করে। কোনো খুনের দৃশ্যকে আরও ভালো ফুটিয়ে তোলার জন্য কি সত্যি সত্যিই খুন করতে হয়? শোলে সিনেমায় গব্বর সিংযের এক থাপ্পড়ে মাছিটাকে মেরে ফেলা কি বলে দেয় না- সে কী চাইছে? একটি বিখ্যাত ইংরেজি সিনেমার একটি দৃশ্য- যেখানে একটি প্যারাম্বুলেটরে বসে থাকা শিশু ঢালু রাস্তায় গড়াতে গড়াতে যাচ্ছে, আর শিশুর বাবা পিছুপিছু দৌড়চ্ছেন বাঁচাতে। হঠাৎ দেখা গেল উলটো দিক থেকে একটি ট্রাক আসছে। না। শিল্পের প্রয়োজন মেটাতে কোনো সংঘর্ষের দৃশ্য দেখানো হয় নি। পরের সিনে সাদা স্ক্রিন। একটু একটু করে ভরে গেল রক্তিম আভায়। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি তাহাদের কথায় মিঠুনকে দেখা গেছে মাঠে পায়খানা সারতে। গল্পের প্রয়োজনে। কিন্তু চিত্রনাট্যের বা শিল্পের প্রয়োজনে তাকে সম্পুর্ণ উলংগ অবস্থায় দু পা ফাঁক করে সেই কাজটি করতে দেখা যায়নি। পারমিতার একদিনে অথর্ব শ্বাশুড়ীর ভুমিকায় অনবদ্য অপর্ণা সেনের প্রস্রাব দৃশ্যটিও কি একবারও কারোর মনে হয়েছে ভাল অভিনয় হয়নি? সেখানেও কিন্তু ওই ভাল অভিনয় করার জন্য তাকে উন্মুক্ত হতে হয়নি। কিছুদিন আগে জাপানীজ ওয়াইফ সিনেমায় নায়ক রাহুল বোসের স্ব-মৈথুন দৃশ্যের কথা ভাবুন। শিল্পের প্রয়োজন দেখাতে গিয়ে রাহুলকে সম্পূর্ন নগ্ন করা হয়নি। তাতেই দর্শক যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। এক দশক আগের হিন্দি সিনেমা কেয়া কহনা তে নায়িকা প্রীতি জিন্টা কুমারী মা, কি অসাধারন সাহসী মহিলার গল্প।

           গোয়ালতোড়ের বাসিন্দা অমরেন্দ্রর চাছাঁছোলা বক্তব্য, কম পোশাক পরা যদি সাহসিকতার পরিচয় হয় তাহলে আমাদের দেশের গ্রামের নারীরা সবাই খুব সাহসী বলতে হবে, কারণ তাদের কারও উর্ধাঙ্গে পোশাকের বাহুল্য থাকেনা বললেই চলে। অনিকেত রেখা কালিন্দী, আফসানা খাতুন, পদ্মা রুইদাসের প্রসঙ্গ টেনে বললেন এরা কেউ নিজের বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙ্গেছে, কেউ বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে গেছে বাল্যবিবাহের প্রতিবাদে। একমাস আগেই মানবাজারের মায়া বাউরি এলাকার চোলাই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমাছিলেন, তাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং শোষনের বিরুদ্ধে যে সব মহিলারা নিজের জীবনের সমস্ত আশা আকাঙ্খা বিসর্জন দিয়ে বন্দুক তুলেছেন হাতে, জীবন কাটাচ্ছেন জঙ্গলে তারা কি কেউ সাহসী নয় নাকি তাদের বোধ-বুদ্ধি সাবালিকার মত নয়? সাহসিকতার সঙগা কে দেবে? ধনকুবের মিডিয়া গোষ্ঠীরা? যারা রাষ্ট্রের শোষণ ব্যবস্থার অন্যতম একটি পায়া রূপে কাজ করে এবং ছলে বলে কৌশলে দেশের যুবসমাজকে নানা লোভ, অপসংস্কৃতি, ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী করে রাখতে সর্বদা বদ্ধপরিকর।

        আসলে যারা সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন এবং যারা পর্দার পেছনে সকলেই সব কিছু জেনে শুনে সজ্ঞানে বাজারে নতুন কিছু নামানোর চেষ্টায় চার মিনিটের এই রগরগে সিনটি সিনেমায় রেখেছেন। পাওলি যেভাবে বিদেশের রেড কার্পেটে হাঁটাহাটি করা শুরু করেছেন তাতে কালের তত্ত্ব মেনে বার্লিন, কান কি কোথাও দু-একটা পুরস্কার জুটে গেলেও জুটে জেতেও পারে। কিন্তু তাতে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি জগতে কোনো পরিবর্তন হবে? নাকি বাংলা সিনেমায় কোনো প্রভাব পড়বে? ক্রমাগত এরকম চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে থাকলে ভবিষ্যতে এদেশের সেন্সর বোর্ড ক্লোজ আপে নেওয়া চার মিনিটের সেই দীর্ঘ শটটি যেখানে দুজনেরই সমস্ত যৌনাঙ্গ স্পষ্ট প্রতীয়মান, বাদ দেবেই দেবে- হলফ করে বলা যাবে তো?

Monday, August 15, 2011

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পশুবলি


মানভুমের জেলাগুলিতে মনসা পুজোয় পশুবলি সেরকম কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা নয়। হাজার হাজার মনসার থানে লাখে লাখে পাঁঠা, ভেড়া, মুরগি, হাঁস বলি দেওয়া হয়ে থাকে। সমস্যাটি সৃষ্টি হল অন্য জায়গায়। গঙ্গাজলঘাটি থানার সারাংগপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে পশুবলি কেন হবে এই প্রশ্ন নিয়ে যুক্তিবাদী সমিতির তরফ থেকে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দেওয়া হয় ১ আগস্ট ২০০৯। সাথে সাথে পশুবলি বন্ধ করে ভারতীয় আইনকে মান্য করার অনুরোধও জানানো হয় ওই চিঠিতে। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয় নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, গঙ্গাজলঘাটি থানা, গঙ্গাজলঘাটির বিডিও, বাঁকুড়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শককে। চিঠি পাওয়া মাত্রই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রামের ষোলোআনার মাতব্বরদের সাথে আলোচনায় বসে। রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট সেই মাতব্বরদের রায়, পুজো এবং পশুবলি যেমন হচ্ছিল তেমনই হবে কোন নড়চড় হবেনা। গত কয়েক বছরে ওই এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমিতির ভালোই বেসতৈরি হয়েছিল যার ফলে গাঁয়ের যুব সম্প্রদায়ের একাংশ পশুবলির বিপক্ষে। কিন্তু প্রতাপশালী মোড়ল শ্রেনীর রক্তচক্ষু প্রদর্শনের কাছে তারা নেহাতই শিশু। যুক্তিবাদী সমিতির তরফ থেকে থানায় যোগাযোগ করা হলে থানা জানিয়ে দেয় তারা এ বিষয়ে কিছু করতে অপারক। বেশ, ধরা হল এলাকার উদ্যোগী বিডিওকে। বিস্তর আলোচনার পর বিডিও সাহেবও পিছপা হলেন। বিদ্যালয় পরিদর্শক, গ্রাম পঞ্চায়েত সর্বত্রই চালাকি করে পিছলে যাওয়া উত্তর। একটি বে-আইনী এবং সামাজিক অপরাধ বন্ধ করতে প্রশাসনের দরজায় দরজায় বারে বারে হত্যে দেওয়ার পরেও যুদ্ধটি শেষ হল একরাশ হতাশাকে সম্বল করে। বিদ্যালয়ে পড়তে আসা কচি মন আবার তাদের পাঠস্থানে দেখল রক্তের হোলি খেলা।



২০১০ সালে মনসা পুজোর আগে আগে দেখা গেল আরও দুটি বিদ্যালয়-১)মালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ২) মনসা বিদ্যাপিঠ এ পশুবলি হয়। এই দুটির অবস্থানই বাঁকুড়া শহরে। মনসা বিদ্যাপিঠে ক্লাশরুমের মধ্যেই হাঁড়িকাঠের ফ্রেম নির্মান করা আছে। বিষয়টি জানানো হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এমনকি রাজ্যপাল পর্যন্ত। বিদ্যালয়ে বলি বন্ধের আবেদনে কয়েকশো মানুষের ইন্টারনেটে করা স্বাক্ষর পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, কিন্তু প্রাক ভোট পর্বে তারা এদিকে তাকাবার প্রয়োজন মনে করেননি।



কিছুদিন আগে তথ্য জানার অধিকার আইন’- এ বাঁকুড়া জেলার জন তথ্য আধিকারিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বছর দুয়েক আগে ২০০৯ সালের ১ আগষ্ট গঙ্গাজলঘাটি থানার সারাংগপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে পশুবলি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে যে আবেদন করা হয় এই দু বছরে সে নিয়ে প্রশাসনের তরফে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানান। জবাব এল। জবাবে দেখলাম ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজের চাকরি বাঁচাবার মত করে একটি উত্তর দিয়েছেন।



এবছরও যেন বিদ্যালয়ে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে পশুবলি না হয় তার অনুরোধ করে গত ১৫ জুলাই ২০১১ তে চিঠি দেওয়া হয় বাঁকুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানকে। কপি দেওয়া হয় বিদ্যালয় পরিদর্শক, জেলা শাসক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত। আজ, অর্থাৎ ৬ আগষ্ট অবধি শুধু মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছে যাতে জানা যাচ্ছে উনি সংশ্লিষ্ট সহ বিদ্যালয় পরিদর্শক কে ব্যাপারটি সম্বন্ধে বিশদ খোঁজখবর নিতে বলেছেন।



তন্ত্রে বলা হয়েছে, দেহস্থ আত্মা উষ্ণ শোনিতের দ্বারা সঞ্জীবিত থাকেন; শোনিত ঠান্ডা হইলে আত্মাকেও দেহ ত্যাগ করিতে হয়; সুতরাং আত্মাকে ভোগ দিতে হলে উষ্ণ শোনিতই সর্বোৎকৃষ্ট ভোগ। মুন্ডমালাতন্ত্র ও বৃহৎসারতন্ত্রে আছে, শক্তির উদ্দেশ্যে ছাগ বলি দিলে বাগ্মী হয়, মেষ বলি দিলে কবি, মহিষ বলিতে সম্পদ বৃ্দ্ধি, মৃগ বলি দিলে মোক্ষফল ভাগী হওয়া যায়, গোধিকা বলি দিলে মহাফল লাভ করা যায়, নরবলি দিলে মহাসমৃদ্ধি লাভ হয়, অষ্টসিদ্ধির অধিকারী হওয়া যায়। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, সৌর এবং গাণপত্য-হিন্দু ধর্মের এই পাঁচটি ধারার মধ্যে কেবলমাত্র শাক্তদের মধ্যে বলির রেওয়াজ আছে। ভারতীয় ইসলামীদের মধ্যে শিয়া এবং সুন্নি দুই সম্প্রদায়ই বকরিদের সময় গরু, উঁট, দুম্বা কুরবানি দেয়। ধর্মের ধ্বজাধারীরা প্রচার করে থাকেন, ধর্মীয় কারনে পশুবলি দিলে মানসিক শক্তির বিকাশ হয়। তারা যুক্তি রূপে টেনে আনেন তন্ত্রের কথা। অথচ পুজোর নামে এই নৃশংস প্রথা কোনো ভাবেই মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করেনা বরং দুর্বল এবং অবলা প্রানীদের যে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় এতে খুনী মানসিকতার জন্ম নেয়। বিশেষত শিশুমনে বলিপ্রথার কু প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ থেকে মানসিক রোগ, ভীতি, হিংস্রতা বৃদ্ধি, নিদ্রাহীনতা হতে পারে। সারা পৃ্থিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের এমনটাই অভিমত। আমাদের আলোচ্য বিদ্যালয়টির শিশুগুলি মনের ওপর কি ঘটছে তা সহজেই অনুমেয়।



এখন দেখা যাক ধর্মীয় কারনে পশুবলির বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন কি বলছে?



The prevention of cruelty to animals act, 1960 অনুসারে, প্রকাশ্যে পশুবলি নিষিদ্ধ। কোন প্রত্যক্ষদর্শী ওই বলির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানালে মন্দিরের পূরোহিত সমেত পূজো কমিটির কর্মকর্তা ও বলি দানে অংশগ্রহনকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। আবার Wild life protection act অনুসারে যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী প্রানী হত্যা দন্ডণীয় অপরাধ। জেল এবং জরিমানা দুটোই হতে পারে। Public nuisance act অনুসারে কোনো ব্যক্তির চোখের সামনে বলি দেওয়া যায় না।



ভাবলে অবাক হতে হয়, পশুবলির বিরুদ্ধে এতগুলি জোরালো আইন থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে দুর্গা, কালি, মনসাপুজো, ইদের কুরবানীর সময় কত কত পাঁঠা, ভেড়া, গরু, উঁট নির্বিচারে বলি দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উঁটের মত একটি বিরল প্রজাতির প্রানীকে কুরবানির সময় অকারনে হত্যা করা পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। আর দেশের নির্লজ্জ সরকার ধর্মের দোহায় দিয়ে এইসব বে-আইনী প্রথাকে পশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে কদর্য রূপে বলাৎকার করছে। স্বাধীনোত্তর ভারতে কোনোদিনই সরকার আইনগুলিকে বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেনি। এক্ষেত্রে বামপন্থী ডানপন্থী সব শেয়ালেরই এক রা। আমাদের রাজ্যে ৩৪ বছর একটি কমিউনিষ্ট সরকারের শাসন চলার পরেও পশুবলি বন্ধে প্রশাসনিক স্তরের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তাদের জমানায় প্রতিটি থানায় বামপন্থী পুলিশ ইউনিয়নের উদ্যোগে ফি বছর ঘটা করে কালি পুজো হত, যাতে পশুবলিও হয়ে থাকে। গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় কমিউনিষ্ট নেতাদের পরিচালনায় হয়ে থাকা পুজ়োয় শয়ে শয়ে প্রানী হত্যা হয়ে থাকে।



কোনো এক কালে নরবলির প্রচলন ছিল, সতীদাহপ্রথা ছিল। শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই প্রথাগুলি দূর হয়নি, হয়ওনা। জনসচেতনতা এবং কঠোর আইনের সঠিক প্রয়োগে এই কুপ্রথাগুলিকে প্রায় বিদায় নিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ একান্তই জরুরী, যেমন- দূষণরোধ, চোলাইঠেক বন্ধে, ডাইনিপ্রথা রোধ, পশুবলি রোধ ইত্যাদি। আমাদের সরকার সব গুলি ক্ষেত্রেই পরাজিত। উলটে আমাদের মত যে সব সংঘঠন জনসচেতনতার কাজটুকু করতে যায় তারা প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং রাজ্যের শাসক দলের সরাসরি বিরোধীতার শিকার হয়। তবুও আশা ছাড়া যায় না। একবুক আশা নিয়েই বর্ধমানের বিখ্যাত সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ২০০৫ সালে গিয়েছিলাম, যেখানে ৩০০ ওপর পাঁঠা বলি হত সেবার সংখ্যাটি নেমে এসেছিল ২০ টি তে। কমলাকান্ত কালিবাড়ির ২০ টি পশুবলি কমে দাঁড়িয়েছিল ২ টি তে। রক্ষাকালিবাড়িতে কর্তৃপক্ষ পোস্টার দিলেন জনমতের কারনে এবার বলি বন্ধ করা হল। রবীন্দ্রনাথও তো সারাজীবন বলিপ্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। আমাদের জন্যেই লিখে গেছেন বিসর্জনের মত নাটক। শুধুমাত্র ২৫ বৈশাখ আর ২২ শ্রাবনে গদগদ ভঙ্গিতে কবিতা পাঠেই তাঁকে সম্মান জানানো শেষ হয়ে যায়? তাঁর চিন্তাধারাকে সম্মান জানাতে আমরা এটুকু করতে পারিনা?

Saturday, August 6, 2011

‘রবীন্দ্রনাথের জন্য ছুটি দেবই সাফ কথা মমতার’ —— আনন্দবাজার পত্রিকা

গত ৩১ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকার “রবীন্দ্রনাথের জন্য ছুটি দেবই সাফ কথা মমতার” পড়ে কয়েকটি কথা ব্যক্ত করতে চাইছি। কথাগুলি বলার কারন এই যে, যখন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় বেশীরভাগ সংবেদনশীল সাধারন মানুষ মমতা সরকারের প্রশাসনিক তৎপরতাকে প্রশংসার সাথে মেনে নিচ্ছে, সেই সময় এই হঠাৎ পদক্ষেপ রাজধানীর গতিতে ব্রেক কষা হল না কী? তার সাথে দূষ্টু সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোঁচায় তিনি যখন জোর করে বলেন, “রবীন্দ্রনাথের জন্য ছুটি দিতে হলে বার বার দেবেন”- সেটি মমতার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গির সাথে খাপ খেলেও খাপ খায় না প্রশাসনিক এমার্জেন্সির কর্মতৎপরতার সাথে। মমতাদেবী ভুলে যাবেন না, বাম জমানার গয়ংগচ্ছ ঢিলেঢালা ভঙ্গিমা ছেড়ে সরকারি কর্মচারিরা আপনারই দেওয়া ছূটি বাতিলের সার্কুলেশনকে সাদরে মেনে নিয়েছে, তাদের এতদিনের ফাঁকিবাজির অভ্যাস কষ্ট করে নষ্ট করেছে আপনার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি এবং কাজ করার তাগিদের জন্য। তারা এই রবীন্দ্র বাড়াবাড়িকে কী চোখে দেখছে একবারও ভেবে দেখেছেন? কেন্দ্রিয় এবং রাজ্য সরকার গত দেড় বছর ধরে যেভাবে সার্ধ শতবর্ষের নামে লেবু কচলে তেতো করছেন তাতে আমজনতার রবীন্দ্রপ্রীতি কতটা বাড়ছে বলা শক্ত তবে রবীন্দ্রনাথ যে গান্ধীজি, আম্বেদকর, সর্বপল্লী রাধাকৃ্ষ্ণণের মত রবীন্দ্রআদর্শ বিহীন মনীষিতে পরিনত হতে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত। কংগ্রেসের টপ টু বটম কোন নেতা টি গান্ধির অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করে বলুন তো? তারা সবাই ভোটে জেতে পেশীশক্তির জোরে, আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমি দখল করে সেনা নামিয়ে। আম্বেদকর সংরক্ষণ নীতি এমন ভাবে শুরু করেছিলেন যাতে দু তিন দশকের মধ্যে দলিত শ্রেণিরা সমাজের ওপরের দিকে উঠে আসতে পারে। তার মতামত কে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংরক্ষণ নিয়ে ভোট ভোট খেলা খেলছে। প্রতি বছর ঘটা করে শিক্ষক দিবস পালন করেও পেশাগত ভাবে অবনমনের তালিকায় শিক্ষকের স্থান আজ দু নম্বরে, ডাক্তারের পরেই। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ভেবে দেখা উচিৎ, প্রায় প্রতিটি মনীষীরই এরকম অবস্থা, তারা এক বলে গেছেন, করি আমরা উলটো। এটাই আমাদের রেওয়াজ, এটাই আমাদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা হলাম বিশ্ব আঁতেল। রবীন্দ্রনাথের গান গাই, পদ্য বলি ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, চোখ বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে। আসলে আমরা মুখস্ত বলি। আত্তীকরন করিনা। করলে এত অপকর্ম আমাদের দ্বারা হত না।
এই পরিবর্তনের সময়ে আপনি যদি ভাবতেন যে, রবি ঠাকুর বলে গেছেন- “সমবায় প্রনালীতে জীবিকানির্বাহই আমাদের দেশকে দারিদ্র্য বাঁচাবার একমাত্র উপায়…………শুধু আমাদের দেশ কেন পৃ্থিবীর সকল দেশেই এই প্রনালী একদিন বড় হইয়া উঠিবে”। তাহলে এক কাজ করা যাক, রবি ঠাকুরের সমবায় চিন্তার যে যে দিকগুলি একবিংশ শতাব্দীতেও প্রযোজ্য সেগুলি প্রয়োগ করে কোটরে ঢুকে যাওয়া কুটির শিল্প এবং সমবায় দপ্তর কে ঢেলে সাজাই। রবি ঠাকুর যেহেতু বলেছেন “ ধনের পুজা প্রবল হয়ে উঠেছে………ধনলোভের মত এমন নিষ্ঠুর এবং অন্যায়পরায়ণ প্রবৃত্তি আর নেই”। তাহলে সামনের মরসুমে পাঠশালা থেকেই তার এরকম কোটেশন গুলি ছাত্রছাত্রীদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। বিশ্বকবির বিখ্যাত ‘রাজর্ষি’ কে সম্মান দিয়ে অন্তত ধর্মের নামে নির্বিচারে হাজার হাজার পশুবলি বন্ধ করা যেত। কিছু না পারলেও বাঁকুড়া জেলার যে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোট ছোট শিশুদের সামনে মনসা পুজো উপলক্ষ্যে ঝপাঝপ বলি হতে থাকে সেই বীভৎসতা বন্ধ করার প্রজেক্ট নেওয়া যেত। জানেন কি হাজার প্রতিবাদ সত্বেও ঐ বিদ্যালয়গুলির কমিটি এবছরও পয়লা ভাদ্র পশুবলি করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপনার জানার কথা কেননা প্রশাসন কে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তার কপি আপনাকেও দেওয়া হয়েছে। জানিনা কচি মন গুলির চোখের সামনে যখন রক্ত-লীলার হোলি হবে তখন আপনি রবি ঠাকুর নিয়ে কি প্ল্যান করবেন। রবীন্দ্রনাথের দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর কে স্লোগান করে আগামী পাঁচ বছরের বৃক্ষ রোপনের একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা যেত না কী? বাম জমানায় শুয়ে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা কে রবি ভাবনায় শিক্ষিত করার প্রজেক্ট নেওয়া যায় নিশ্চয়?
রবীন্দ্রনাথ কেন যে কোনো মনীষী কেই সম্মান জানানো যায় তার চিন্তা, তার আদর্শ, তার স্বপ্নকে পূর্ণ করার মাধ্যমে। তাকে নিয়ে হাজার নাচানাচি বা আঁতলামোর মাধ্যমে নয়।

Wednesday, June 8, 2011

PLEASE ANSWER THE BLIND FOLLOWERS OF INDIAN YOGA GURU RAMDEV





7TH JANUARY 2006 IN A NDTV INDIA TALK SHOW, ON THE QUESTION OF PRABIR GHOSH, RAMDEV SAID THAT HE KNOWS 'KHECHARI MUDRA' IN WHICH MAN CAN LIVE WITHOUT TAKING FOOD AND DRINK. NOT ONLY THAT HE ALSO CLAIMED THAT HE IS IMMORTAL. IF RAMDEV KNOWS THAT YOGA THEN WHY HE IS SERIOUSLY ILL AFTER HIS TWO DAYS HUNGER STRIKE??? RAMDEV AND HIS BLIND FOLLWERS PLEASE ANSWER. PLEASE. PLEASE. OTHERWISE PUBLIC 'LL THINK THERE IS NOTHING IN YOUR YOGA. ALL ARE BOGUS RELIGOUS EMOTION

Sunday, June 5, 2011

What makes Ramdev so important?

গান্ধি থেকে নেতাজি, নকশাল নেতা থেকে মমতা ব্যানার্জি সকলেই নিজেদের প্রতিবাদের অহিংস হাতিয়ার রূপে অনশন কে বিভিন্ন সময়ে বেছে নিয়েছিলেন। তারা তাদের অনশনে বিপুল জনগনের সাড়া পেয়েছিলেন। কিন্তু রামদেবের বেলায় তিনি যা ভেবে ছিলেন তার খুব কম অংশই সাড়া দিয়েছেন। উলটে তিনি সরকারের সাথে গোপন গড়াপেটায় গিয়ে তার অগনিত ভক্তকুলকেও প্রতারিত করলেন। দুর্নীতি বিরোধী সভা করতে সরকারের কাছে যোগ সভা করার মিথ্যে অনুমতি চেয়ে ফাঁসলেন। ফাঁসালেন নিরপরাধ ভক্তদের। শেষমেশ ল্যাজেগোবরে হয়ে সালোয়ার কামিজ পরে মেয়ে সেজে পলায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। কেন? কেন? কেন এত মিথ্যাচারিতা?







What makes Ramdev so important?

Thursday, April 21, 2011

জাপানের পরমানু বিপর্যয়- বাস্তব টা কি?


জাপানের পরমানু বিপর্যয়- বাস্তব টা কি?


ফুকুশিমাঃ

রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় দুশো পঁচিশ কিলোমিটার দূরে ফুকুশিমা দাইচি পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১১ মার্চ ২০১১, নয় রিখটার স্কেলের ভুমিকম্প এবং তার সাথে সাথে সুনামির জেরে জাপানের এই পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বিষ্ফোরণ হয় এবং এর জেরে ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরন। সতর্কবার্তা জারি করা হয় সর্বত্র। এখনও ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রন করা যায়নি, চেষ্টা চালাচ্ছেন জাপান সরকার, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সারা পৃ্থিবীর পরমানু বিজ্ঞানীরা। ফুকুশিমার দুর্ঘটনা একই সঙ্গে অনেক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে আমাদের- জাপানের পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির আপৎকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক ছিল না, নাকি পরমানু বিদ্যুৎ জিনিষটাই বিপর্যয় ডেকে আনে।

ফুকুশিমা পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১ মার্চঃ

যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এত তোলপাড় তার নাম ফুকুশিমা-১। ফুকুশিমা-১ এর মোট ছ’টি ইউনিট। সুনামির দিন সকাল পর্যন্ত ১নং, ২নং, ৩নং ইউনিট চালু অবস্থায় ছিল। বাকি তিনটি ইউনিট মেরামতির কারনে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ ছিল। ১১ মার্চ দুপুরে সমস্ত উত্তর জাপানের সাথে সাথে আন্দোলিত হল ফুকুশিমা। যেহেতু ফুকুশিমা কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছিল ষাটের দশকে তাই এর নকশা পুরোনো এবং সেই অনুযায়ী ২নং ইউনিটটি ভুকম্প ত্বরণ সহ্যক্ষমতা ছিল ৪.৩৮ মিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড, ৩নং ইউনিটের ৪.৪১ মিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড এবং ৫ নং ইউনিটের ৪.৫২ মিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড। অথচ সেদিন ২, ৩ ও ৫ নং ইউনিটে আছড়ে পড়েছিল যথাক্রমে ৫.৫, ৫.০৭, ৫.৪৮ ত্বরনের ভুকম্প। ১ নং, ৪ নং এবং ৬ নং ইউনিটে যে কম্পন এসে পৌঁছেছিল তা নকশা অনুযায়ী তাদের সহ্যসীমার মধ্যেই ছিল। সেদিন যেই না আন্দোলন শুরু হল, সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় সতর্কীকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে চালু থাকা তিনটি ইউনিটে নিজে নিজেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া চুল্লিতে সর্বদা ধিকি ধিকি করে তাপ উৎপন্ন হতেই থাকে, তাছাড়া যে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ থাকে সেখান থেকেও কিছু পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হতে থাকে। তাই চুল্লি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও বাইরে থেকে ঠান্ডা জল পাম্প ও পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করে চুল্লি ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। একে বলে শীতলীকরণ ব্যবস্থা। ঠিকঠাক শীতলীকরণ হলে কয়েকদিনের মধ্যে চুল্লি এক্কেবারে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। চুল্লিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ এনে শীতলীকরনের পাম্পগুলি চালু রাখার কথা। কিন্তু প্রায় একই সময় ভয়ানক সুনামির ধাক্কায় স্থানীয় পাওয়ার গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরেও ছিল আপৎকালীন ডিজেল জেনারেটরের ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে শীতলীকরনের পাম্প চালু করা যাবে। কিন্তু ততক্ষনে বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে থাকা ১৯ ফুট পাঁচিল টপকে ৪০-৫০ ফুটের বিশালকায় ঢেউ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যেকার সমস্ত কিছু লন্ডভণ্ড করতে শুরু করেছে যার ফলে ডিজেল জেনারেটরটাই চালু করা যায়নি। ডিজেল জেনারেটরের ব্যর্থতার পর শীতলীকরণ পাম্প চালু করতে ব্যাটারির ব্যবস্থা করা হয়। ব্যাটারির বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা আট ঘন্টা। ঠিক হয়, অন্যান্য কেন্দ্রগুলি থেকে আরও ব্যাটারি এনে অবস্থার সামাল দেওয়া হবে। সেটাও সম্ভব হয়নি কারণ সুনামির জলের তোড়ে তখন পাম্পের সাথে ব্যাটারির কানেকশন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ফলতঃ চুল্লির উত্তাপ বেড়ে গিয়ে চুল্লির ভেতরে শীতলীকরনের উদ্দেশ্যে জমে থাকা জল আবদ্ধ অবস্থায় প্রচন্ড বাস্পচাপ সৃষ্টি করে। এদিকে চুল্লিতে ইউরেনিয়াম থাকে যে ফাঁপা খোলকের মধ্যে সেই জারকোনিয়াম দণ্ডের জারকনিয়ামের সাথে জলীয় বাস্পের বিক্রিয়ায় তৈরি হয় প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন গ্যাস। মনে করা হচ্ছে এই হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রবল চাপেই ঘটে বিস্ফোরণ, যাতে চুল্লিগুলির একাংশ উড়ে যায়। এর পরের কাহিনী সবার জানা। জাপান সহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তেজস্ক্রিয়তার ভয়, তেজস্ক্রিয় বিকিরন ছড়াতে থাকা চুল্লিগুলিকে ঠান্ডা করে তাদের বিকিরণের পরিমান কমানো –সব নিয়ে উদ্বেগ কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। পরমানু বিদ্যুৎ বিরোধীরা স্বভাবতই তাদের গলার স্বর আরও একধাপ চড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন।

বাস্তব কি বলছে?

নিঃসন্দেহে পরমানু বিপর্যয় ভয়ের ব্যাপার। কিন্তু শুধুমাত্র ভয় না পেয়ে আমাদের বাস্তবটকে ভালো করে বুঝতে হবে। নজর রাখতে হবে পরিসংখ্যানেও। আমাদের বুঝতে হবে শেষ হয়ে আসা কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃ্তিক গ্যাসের জ্বালানী দ্বারা আর বেশিদিন তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। সারা পৃথিবীতে যা কয়লা মজুত আছে তা দিয়ে চলবে বড়জোর দুশো বছর, খনিজ তেল চল্লিশ বছর এবং প্রাকৃ্তিক গ্যাস ষাট বছর। অথচ ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদাকে অস্বীকার করাও সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়া মানে সমস্ত কিছু থমকে যাওয়া। আর কয়লা, তেল, গ্যাস পুড়িয়ে আমরা প্রতি মুহুর্তে কত প্রাণের বলি দিচ্ছি সেটিও ভাবতে হবে। ২০০৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনির ধোঁয়া, যানবাহন ও কারখানার ধোঁয়ার প্রত্যক্ষ কারনে প্রতি বছর বিশ্বে মারা যান প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ। এছাড়া কাঠের জ্বালানির ধোঁয়ার প্রত্যক্ষ কারণে গরিব দেশগুলিতে প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ’।এছাড়া পরোক্ষ ফলাফল তো আছেই। সেটি হল গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এই প্রবন্ধটি এলেবেলে কেউ লেখেননি। লিখেছিলেন বিবিসি নিউজের পরিবেশ বিষয়ক ইনচার্জ অ্যালেক্স কার্বি। তাছাড়া পরমানু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দূর্ঘটনার হার অন্যান্য বিদ্যুতের থেকে অনেক কম সেটিও প্রমানিত সত্য। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পরমানু বিদ্যুতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত গবেষণা করতে গিয়ে ১৯৬৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনাগুলি নিয়ে একটি পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। সেখানে তারা কয়লা, প্রাকৃ্তিক গ্যাস, জলবিদ্যুতের পাশাপাশি পরমানুকেও রেখেছেন। তারা দেখেছেন প্রতি দশ লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যেখানে কয়লার তাপবিদ্যুতে বার্ষিক মৃত্যুর পরিমান ৩৪২ জনের, প্রাকৃ্তিক গ্যাসে ৮৫ জনের, জলবিদ্যুতে ৮৮৩৩ জনের সেখানে পরমানুতে মাত্র ৮ জনের। নিউক্লিয়ার এনার্জি এজেন্সির ঘোষনা অনুযায়ী আধুনিককালের পরমানু চুল্লিগুলি এতটাই উন্নতি করেছে যে তার জন্মলগ্নের চুল্লির তুলনায় দূর্ঘটনাকালে তেজস্রিয় বিকিরণের সম্ভাবনা ১৬০০ ভাগ কমে গেছে।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিও প্রাকৃ্তিক বিপর্যয়ে নিরাপদ নাকি? আমেরিকার বাফাল ক্রীক জলাধার, ক্যানিওন জলাধার, লনলেক জলাধার, টেটোণ জলাধার, ইতালির ভাল দি সাভা, ক্রোয়েশিয়ার পেরুকা, নিউজিল্যান্ডের অপুহা, নাইজেরিয়ার গুসাউ, কাজাকাস্থানের কিজিল আগাশ- গত ৪০ বছরে সারা বিশ্বে ছোট বড়ো মিলে কয়েক শো জলাধারে দূর্ঘটনা ঘটেছে যেখানে প্রাণ গেছে বহু লক্ষ লোকের, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপূরনীয়। বেশিদূর যেতে হবে না, মাত্র তিন বছর আগে কোশী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে নেপাল এবং বিহারে কি পরিনাম হয়েছিল?
মাত্র একদিনের মধ্যে উত্তর বিহারের আরারিয়া, সুপুল, সহর্ষ, মাধেপুরা, পূর্নিয়া, কাটিহার, খাগারিয়া, ভাগলপুর ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। নদীবাঁধের পাশে থাকা ২৭ লক্ষ লোকই যে শুধুমাত্র আক্রান্ত হয়ে ছিল তা নয়, বাঁধ ভাঙ্গা বন্যায় এসব অঞ্চলের প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত হন। এত দ্রুত এত মানুষের মৃত্যু হয় যে তার সঠিক হিসেব রাখা সম্ভব হয়নি। এও তো প্রাকৃ্তিক বিপর্যয়। এখানেও আছে মৃত্যু, এখানেও আছে প্রভূত সম্পদের ক্ষতি, পূনর্বাসন-উদ্বাস্তু সমস্যা, বিপর্যয়ের রেশ না কাটাতে পারা মানুষদের মানসিক ভারসাম্যহীনতা।
বিপর্যয় সর্বদা ভয়ঙ্কর, সে যেখানেই হোক না কেন। মৃত্যু সর্বদা কষ্টের সে যারই হোক না কেন। সারা বিশ্বে প্রতি বছর কত লোক পথ দূর্ঘটনায় মারা যায় জানেন? ২০০৪ সালের রেকর্ড অনুযায়ী প্রায় বারো লক্ষ। আর আহত হন প্রায় পাঁচ কোটি। তবে কি আমরা গাড়ি চড়া ছেড়ে গোরুর গাড়ির জমানায় ফিরে যাবো? ভারতের মত গরিব দেশ যেখানে দেশের বেশির ভাগ মানুষ না চড়তে পান গাড়িতে, না তারা পাকা রাস্তায় হাঁটতে পান, সেখানে ২০০৪ সালে এক লক্ষ পাঁচ হাজার মানুষ পথ দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর জাপানের পরমানু বিপর্যয়ে এখনও অবধি মারা গেছেন ক’জন? মাত্র ২ জন। বিকিরণে নয়, এরা মারা গেছেন আঘাতে এবং রক্তক্ষরনে। তাই যখন জ্বালানি সমস্যায় আমরা জেরবার, জীবাশ্ম জ্বালানীর ধোঁয়ায় গ্লোবাল ওয়ার্মিংএর পৃ্থিবী ধ্বংসের হুমকি, এদিকে সৌর-বায়ু বিদ্যুতের মত পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎক্ষেত্র গুলি থেকে সুলভে পর্যাপ্ত পরিমান বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা পাওয়া যাচ্ছে না সে সময় স্রেফ হিরোশিমা-নাগাসাকি পরমানু বোমা বিস্ফোরনের ভয় নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হলে চলবে না। যে জাপানের হিরোশিমা দেখে পৃথিবী কাঁদে, সেই জাপান কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পরমানু বিদ্যুৎকে নিজের দেশের অন্যতম শক্তিভান্ডারে পরিনত করেছে। উন্নত দেশগুলির উন্নত রাস্তা, উন্নত যানবাহন, উন্নত ট্রাফিক পরিচালন ব্যবস্থা যেমন দূর্ঘটনার হার কমিয়েছে তেমনই পরমানু চুল্লির উন্নতিও পারমানবিক বিপর্যয়ের হার কমাবে।

Saturday, February 26, 2011