‘ছত্রাক’ সিনেমায় সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় পাওলি দামের বিছানা দৃশ্যে অভিনয় করার ঘটনায় এপার-ওপার দুই বাংলারই তামাম মিডিয়া গোষ্ঠী উত্তেজনায় ফুটছে। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ প্রথম পাতাতেীই নিউজটি কভার করল তো ‘চ্যানেল টেন’ শুরু করল রতিকলার ফুটেজ দেখাতে। এ পত্রিকা বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়। বাচ্চা থেকে বুড়ো-অনেকেই ইন্টারনেটে ইউটিউব খুলছে বাংলা সিনেমার নায়িকার পর্নো সিন দেখতে।
আ্লোচনা জমে উঠেছিল ডাঃ অনিন্দ্য রায়ের অনবদ্য বিশ্লেষন, কবি সুদীপ চট্ট্যোপাধ্যায়ের তথ্যনিষ্ঠ বক্তব্য, এবং সমাজসেবী ভাস্কর সেনের অসাধারণ কনক্লুশনে। সেখানে ছিলেন ঝাড়খন্ড স্টুডেন্ট ফেডারেশনের মুখপাত্র অমরেন্দ্র টুডু, ওই সংগঠনেরই সাগিনা মাহাত, এপিডিআর কর্মী অনিকেত রায়, সমাজসেবী বাপ্পাদিত্য হাজরা, যুক্তিবাদী সমিতির সুধীর হাঁসদা, আমি সহ আরো অনেকে। আলোচনার প্রথম পর্বে আলোচকরা এক বিষয়ে সিদ্ধান্তে এলেন যে, ঐ সিনেমায় পাওলির ওরাল সেক্সের দৃশ্যটি কতটা ন্যাচারাল বা কতটা ভালগার, চিত্রনাট্যের পরিপ্রেক্ষিতে দৃশ্যটির অবতারনার প্রয়োজন ছিল কি ছিল না, ঘোমটার আড়ালে থাকা বাঙ্গালী রমণীকূলের রক্ষণশীলতায় জোর ধাক্কা দিল কি দিল না-এসব নিয়ে আলোচনা করা বৃথা। কেননা কোন্ দৃশ্যকে আমরা ভালগার বলব সেটা আপেক্ষিক এবং ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করে। আর সব ছবির পরিচালকই বলবে এই দৃশ্যটির শৈল্পিক প্রয়োজনীয়তা আছে, তার উদ্দেশ্য যতই না বাজারি হোক। বরং আমাদের আলোচনা হতে পারে এই সিনামাটি নিয়ে মিডিয়া গোষ্ঠীর ভয়ঙ্কর সব মতামত নিয়ে। এ টু জেড সব পত্রিকা্র এক সূর-বাংলা সিনেমা এতদিনে সাবালক হল। পাওলির-অনুব্রতর নগ্নতার দৃশ্যটিকে সবাই বাংলা চলচ্চিত্রের ম্যাদামারা সফরের অন্যতম বাঁক বলে মনে করছে। তাদের ভাবখানা এমন, যেন কয়েকটি থ্রি-এক্স মার্কা পর্নো দৃশ্য থাকলেই সিনেমা হয়ে যায় সাবালক আর তার নায়ক নায়িকারা সাহসী। পাওলি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “যদি বিছানায় যৌনতার সময় আমাদের গায়ে কাপড় না থাকে তবে পর্দায় সেই চরিত্রে অভিনয়ের সময় গায়ে কাপড় রাখতে হবে কেন?”
গোয়ালতোড়ের বাসিন্দা অমরেন্দ্রর চাছাঁছোলা বক্তব্য, কম পোশাক পরা যদি সাহসিকতার পরিচয় হয় তাহলে আমাদের দেশের গ্রামের নারীরা সবাই খুব সাহসী বলতে হবে, কারণ তাদের কারও উর্ধাঙ্গে পোশাকের বাহুল্য থাকেনা বললেই চলে। অনিকেত রেখা কালিন্দী, আফসানা খাতুন, পদ্মা রুইদাসের প্রসঙ্গ টেনে বললেন এরা কেউ নিজের বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙ্গেছে, কেউ বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে গেছে বাল্যবিবাহের প্রতিবাদে। একমাস আগেই মানবাজারের মায়া বাউরি এলাকার চোলাই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমাছিলেন, তাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং শোষনের বিরুদ্ধে যে সব মহিলারা নিজের জীবনের সমস্ত আশা আকাঙ্খা বিসর্জন দিয়ে বন্দুক তুলেছেন হাতে, জীবন কাটাচ্ছেন জঙ্গলে –তারা কি কেউ সাহসী নয় নাকি তাদের বোধ-বুদ্ধি সাবালিকার মত নয়? সাহসিকতার সঙগা কে দেবে? ধনকুবের মিডিয়া গোষ্ঠীরা? যারা রাষ্ট্রের শোষণ ব্যবস্থার অন্যতম একটি পায়া রূপে কাজ করে এবং ছলে বলে কৌশলে দেশের যুবসমাজকে নানা লোভ, অপসংস্কৃতি, ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী করে রাখতে সর্বদা বদ্ধপরিকর।
১১ সেপ্টেম্বর, রবিবার, বাঁকুড়ায় যুক্তিবাদী সমিতির সাপ্তাহিক স্টাডিক্লাশের প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সিনেমা ‘ছত্রাক’। ঘটনাচক্রে এই দিনটি হিউম্যানিষ্টস অ্যাসোসিয়েশনের দশম প্রতিষ্ঠা দিবসও। শ্রীলঙ্কার পরিচালক বিমুক্কি জয়াসুন্দরের এই দ্বিভাষিক ছবিটিতে নায়িকার ভুমিকায় অভিনয় করেছেন পাওলি দাম। বিতর্ক শুরু হয়েছে ছবির একটি দৃশ্য নিয়ে যেখানে দেখা যায় যে, নায়িকা তার সহ-অভিনেতা অনুব্রতর সাথে ওরাল সেক্সে মত্ত। প্রায় চার মিনিট দীর্ঘ এই ক্লোজ আপ দৃশ্যটিতে পাওলি-অনুব্রত সম্পূর্ণ নগ্ন, একটুও সুতো নেই। টলিউড তো দূর অস্ত, বলিউডও সামনের কয়েকবছরে এরকম সিনে পৌঁছাতে পারবেনা হলফ করে বলা যায়।
সুদীপ চট্টোপাধ্যায় তুললেন স্তানিস্কোভস্কি থেকে ব্রেখটের কথা। উঠে এল শিল্পের ক্রমবিকাশের প্রসঙ্গ। ‘আর্টস ফর আর্টসসেক’ এর ধারনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কি ভাবে বদলে যায় ‘আর্টস ফর হিউম্যানসেকে’। দেশে দেশে কমিউনিজমের হাওয়া এক্ষেত্রে সদর্থক ভুমিকা নিয়েছিল। অনিন্দ্য রায় বোঝালেন-শিল্প কি? ঘটনাকে অভিনয়ের মাধ্যমে রিয়েলিষ্টিক করে তোলা। গল্প, চিত্রনাট্য,অভিনয়- সবে মিলে দর্শকের সামনে এমন এক ইলিউশ্যন তৈরি হবে যাতে সে সত্যি বলে মনে করে। কোনো খুনের দৃশ্যকে আরও ভালো ফুটিয়ে তোলার জন্য কি সত্যি সত্যিই খুন করতে হয়? ‘শোলে’ সিনেমায় গব্বর সিংযের এক থাপ্পড়ে মাছিটাকে মেরে ফেলা কি বলে দেয় না- সে কী চাইছে? একটি বিখ্যাত ইংরেজি সিনেমার একটি দৃশ্য- যেখানে একটি প্যারাম্বুলেটরে বসে থাকা শিশু ঢালু রাস্তায় গড়াতে গড়াতে যাচ্ছে, আর শিশুর বাবা পিছুপিছু দৌড়চ্ছেন বাঁচাতে। হঠাৎ দেখা গেল উলটো দিক থেকে একটি ট্রাক আসছে। না। শিল্পের প্রয়োজন মেটাতে কোনো সংঘর্ষের দৃশ্য দেখানো হয় নি। পরের সিনে সাদা স্ক্রিন। একটু একটু করে ভরে গেল রক্তিম আভায়। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি ‘তাহাদের কথা’য় মিঠুনকে দেখা গেছে মাঠে পায়খানা সারতে। গল্পের প্রয়োজনে। কিন্তু চিত্রনাট্যের বা ‘শিল্পের’ প্রয়োজনে তাকে সম্পুর্ণ উলংগ অবস্থায় দু পা ফাঁক করে সেই কাজটি করতে দেখা যায়নি। পারমিতার একদিনে অথর্ব শ্বাশুড়ীর ভুমিকায় অনবদ্য অপর্ণা সেনের প্রস্রাব দৃশ্যটিও কি একবারও কারোর মনে হয়েছে ভাল অভিনয় হয়নি? সেখানেও কিন্তু ওই ‘ভাল’ অভিনয় করার জন্য তাকে উন্মুক্ত হতে হয়নি। কিছুদিন আগে ‘জাপানীজ ওয়াইফ’ সিনেমায় নায়ক রাহুল বোসের স্ব-মৈথুন দৃশ্যের কথা ভাবুন। ‘শিল্পের প্রয়োজন’ দেখাতে গিয়ে রাহুলকে সম্পূর্ন নগ্ন করা হয়নি। তাতেই দর্শক যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। এক দশক আগের হিন্দি সিনেমা ‘কেয়া কহনা’ তে নায়িকা প্রীতি জিন্টা কুমারী মা, কি অসাধারন সাহসী মহিলার গল্প।
আসলে যারা সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন এবং যারা পর্দার পেছনে সকলেই সব কিছু জেনে শুনে সজ্ঞানে বাজারে নতুন কিছু নামানোর চেষ্টায় চার মিনিটের এই রগরগে সিনটি সিনেমায় রেখেছেন। পাওলি যেভাবে বিদেশের রেড কার্পেটে হাঁটাহাটি করা শুরু করেছেন তাতে কালের তত্ত্ব মেনে বার্লিন, কান কি কোথাও দু-একটা পুরস্কার জুটে গেলেও জুটে জেতেও পারে। কিন্তু তাতে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি জগতে কোনো পরিবর্তন হবে? নাকি বাংলা সিনেমায় কোনো প্রভাব পড়বে? ক্রমাগত এরকম চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে থাকলে ভবিষ্যতে এদেশের সেন্সর বোর্ড ক্লোজ আপে নেওয়া চার মিনিটের সেই দীর্ঘ শটটি যেখানে দুজনেরই সমস্ত যৌনাঙ্গ স্পষ্ট প্রতীয়মান, বাদ দেবেই দেবে- হলফ করে বলা যাবে তো?
6 comments:
sob i to bujhlam..but porn er jonyo alochona sobha?
na bhai... apni hoi purota poren ni. bujhte asubidhe hoeche. porn er jonno alochona sova noi... alochona ta hoeche porno graphy te ovinoi ke jebhabe media gosthi sahosikotar porichoy bole chalate chaiche tar biruddhe.
@biplab das....ei discussion ta khub valo haye che...ami ekmot paoli dam cinema te khule acting koreche bole,,,,brave woman haye gelo...........ar jangole...rastrio sosoner against e..balya bibah er against e....ba aro onek jai gai jekha ne..meye ra agiye asche...tader brave ta tahole kivabe defife korte hobe???? i think all those media who r shouting abt brave of paoli dam....they should think abt it....exactly they have to know wt needs for woman et have to do to be brave of woman...
@Ritwik.....read the full paragraph then make comments.don't take it lightly....
Biplob babu, apni puro cinema-ta dekhen ni. tahole 4 minute-er clipping dekhe ki kore bolchhen je chhatrak ekti pornography?cinematic karone oi scene-er picturisation hoyni, puro film na dekhe erokom comment kora ki somicheen?
maninmEkdam thik
Ekdam Thik!!
Post a Comment