বর্ধমানে শিশুর মৃতদেহ এবং মড়ার খুলি বহনের সময় গ্রেপ্তার আট গাজন সন্ন্যাসী
গাজন উপলক্ষে চৈত্রের শেষে চলে মৃতদেহ ও মড়ার খুলি নিয়ে নৃত্য
দু’মাসের একটি বাচ্চার মৃতদেহ এবং মড়ার খুলি বহনের সময় আট গাজন
সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তার করেছে বর্ধমান থানার অধীন শক্তিগড় ফাঁড়ির পুলিশ।
বর্ধমান থানার বেচারহাট এলাকার শ্মশান থেকে বাচ্চার মৃতদেহ এবং খুলিটি নিয়ে
যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশ মৃতদেহ এবং খুলিটি বাজেয়াপ্ত করেছে। বর্ধমান মেডিকেল
কলেজের পুলিশ মর্গে মৃতদেহ এবং খুলিটির ময়না তদন্ত করিয়েছে পুলিশ। ধৃত
আটজনেরই বাড়ি বর্ধমান থানার সোনা পলাশি গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,
চৈত্র মাসে গাজন উপলক্ষে বর্ধমানের কুড়মুন, সোনা পলাশি, পারুই, কুবাজপুর সহ
আশপাশের কয়েকটি গ্রামে মড়ার খুলি নিয়ে নাচানাচি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে আট
সন্ন্যাসী বেচারহাট শ্মশান থেকে মাস দুয়েকের বাচ্চাটির মৃত দেহ এবং মড়ার
খুলি নিয়ে মোটর ভ্যানে সোনা পলাশি গ্রামে যাচ্ছিল। শক্তিগড় বাজার এলাকায়
সন্ন্যাসীদের দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। তাঁরা ভ্যানটিকে আটকান।
তল্লাশিতে বাচ্চার মৃতদেহ এবং মড়ার খুলি দেখতে পান স্থানীয়রা। এরপরই
ভ্যানটিকে আটকে শক্তিগড় ফাঁড়িতে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে শক্তিগড় ফাঁড়ির
পুলিশ সন্ন্যাসীদের গ্রেপ্তার করে। ভ্যানটিকেও পুলিশ আটক করেছে। এদিনই
ধৃতদের বর্ধমানের সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসা
এই অবৈজ্ঞানিক, আইনবিরোধী প্রথা বন্ধের জন্য পুলিশ-প্রশাসন সহ সাধারণ
মানুষের কাছে আবেদন ও প্রচার করে আসছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
এবং হিউম্যানিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। সাধারণ মানুষ এমনকি ঐ সমস্ত এলাকার কিছু
মানুষ এই প্রথা বন্ধের পক্ষে মত প্রকাশ করলেও পুলিশ-প্রশাসনকে কোন দিনই এই
প্রথা বন্ধের জন্য কোনও ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এমনকি ২০০৯ সালে তৎকালীন
পুলিশ সুপারের কাছে এই দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রথা বন্ধের জন্য আবেদন
করা হলে, তৎকালীন পুলিশ সুপার জানান,এমন কোনও ঘটনা এই জেলায় হয় বলে জানা
নেই। যদিও প্রতি বছর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই মৃত মানুষের মাথার খুলি এবং
মৃত শিশুর পচাগলা দেহ নিয়ে নাচানাচি হয়। আজকের এই সাধারণ মানুষের এগিয়ে এসে
গাজন সন্ন্যাসীদের আটক করা এবং পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে যথাযুক্ত আইনি
ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হওয়ায় আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment