Wednesday, September 4, 2019

ফার্স্ট বয় ফার্স্ট গার্লরা প্রাথমিক শিক্ষক হতে চায় কি?

ফার্স্ট বয় ফার্স্ট গার্লরা প্রাথমিক শিক্ষক হতে চায় কি?
কে ভালো, কে খারাপ, কী ঘটে, কে ফাঁকিবাজ- সে নিয়ে তো হরদম লড়ে যাচ্ছি। এখন বরং আলোচনা করি কী হওয়া উচিত, সে নিয়ে। এই আলোচনাটি হাইপোথিটিক্যাল। এখানে পশ্চিমবঙ্গ-ভারত, কেন্দ্র-রাজ্য, চাকরি পাওয়া- না পাওয়া, সরকারি-বেসরকারি, আমি-তুমি, ব্যক্তিগত সেন্টিমেণ্টের কোনো জায়গা নেই।
ক্লাসের ভালো লেখাপড়ার ছেলেরা চলে যায় ইঞ্জিনিয়ারিং , ডাক্তারিতে। মনপসন্দ রোজগার সেখানে। যারা পড়ে থাকে জেনারেল কলেজে ভর্তি হয়। অল্প স্বল্প কলেজ পড়ে হয় সাধারন চাকুরে, একটু বেশিদিন ধরে ধৈর্য্য নিয়ে পড়লে হাইস্কুল শিক্ষক, আরও একটু বেশি সময় নিয়ে পড়লে অধ্যাপক। মোটামুটি এটিই সিনারিও। এখানে কোনো ব্যতিক্রমের প্রসঙ্গ টানছি না। কারন ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমই। তা সে যতই উজ্জ্বল হোক বা অনুজ্জ্বল।
যাই হোক। এবার পড়ে রইল এমন একটা অংশ যারা এটার মধ্যে পড়ছে না, কিম্বা যারা নানারকম ডিগ্রির পরেও কোনও কারনবশত অন্যান্য পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে পড়েছে। তারা বিভিন্ন চাকরি খুঁজতে থাকে। কেউ ব্যবসা শুরু করে। এই সব খুঁজতে থাকা মানুষের একটা বড়ো অংশ প্রাথমিক শিক্ষকতায় যোগ দেয়। তাদের অনেকে হয়তো ইতিমধ্যে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করে ফেলেছে।
একজন প্রাথমিক শিক্ষক কত বেতন পান?
মোটামুটি বলা যায়, সরকারি বেতনভুক মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে নীচের দিকে। আর সমস্ত শিক্ষক কূলের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তার কাজটি কী?
প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন পরিবেশ থেকে উঠে আসা, বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক গঠন সম্পন্ন শিশুদের জীবনের প্রথম দিকের পাঠদান। দুটি ভিন্ন বাড়ি থেকে আগত শিশুর মধ্যে আসমান জমিন স্বভাবগত পার্থক্য থাকে। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষককে একই সাথে কয়েকঘণ্টার জন্য ছাত্রের খাওয়াদাওয়া, হাগু-মুতু, শরীর, কান্না-হাসি, মারামারি, মান-অভিমান - এসবের দ্বায়িত্ব নিতে হয়। যে দ্বায়িত্বের গুণগত মান শিশু ছাত্রের ভবিষ্যতের চরিত্র নির্ধারণ করে। ( ভারতের মত দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের আরও কিছু অতিরিক্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে হয়, সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না)
একটি রুমের মধ্যে একজন মাত্র প্রাথমিক শিক্ষকের কাছে অনেক সময় সব ক্লাসের ছাত্ররা সব বিষয়গুলি একসাথে পড়ে। সত্যি বলতে কী, এই কাজটিতে যথেষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন। হয়তো একজন মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চেয়েও বেশি। কারন বড় ছাত্রদের পড়ানোর ঝামেলা কম। দায়িত্ব অপেক্ষাকৃত কম। যিনি ইতিহাস বা জীববিজ্ঞান পড়াচ্ছেন, তিনি কাদের পাচ্ছেন? যারা ইতিমধ্যেই কয়েকটা ক্লাস টপকে এসেছে, পড়াশোনার সাথে অভ্যস্ত। আরও সুবিধে হল, সেই ছাত্ররা ইতিহাস ক্লাসে ইতিহাসের জন্যই মনোসংযোগ করতে পারে। কলেজের অধ্যাপকদের কাজটি আরও সহজ। তারা এমন একটি ছাত্রদলকে পায় যারা সেই নির্দিষ্ট বিষয়টির জন্য ইতিমধ্যেই জ্ঞানী বা জ্ঞান লাভ করতে উৎসাহী।
তাই ডিগ্রির ব্যাপারটা একটুক্ষণের জন্য সরিয়ে রাখলে এটাই দাঁড়াবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন হওয়া উচিৎ সবচেয়ে বেশি। সমস্ত পেশার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
মেধাবী প্রাথমিক শিক্ষক দরকার। অনেক বছর ধরে অনেক কিছু পড়াশোনা করা বিশাল কিছু জ্ঞানীগুণী না হলেও চলবে। সত্যি বলতে কী, কোনো একটি ব্যাচের সবচেয়ে উজ্জ্বল ছাত্রদের প্রাথমিক শিক্ষাদানে আকর্ষিত করা দরকার। দশ ক্লাস বা বারো ক্লাসের পর একটা জবরদস্ত এন্ট্রান্স। এন্ট্রান্সে পেলে বছর পাঁচের ট্রেনিং। ট্রেনিং শেষে সর্বোচ্চ বেতনের নিশ্চিত চাকরি- 'প্রাথমিক শিক্ষক'। সব দেশে, সব প্রদেশে, সব যুগেই এটি হওয়া উচিৎ।
(এ সিস্টেমে চললে আরও একটা মজাদার ব্যাপার ঘটার সম্ভাবনা আছে। তখন কতকগুলো ঘরকুনো, স্বার্থপর, ছায়া প্রকাশণীর মডেল ক্লাসে ফার্স্ট নাও হতে পারে। পুরো হিসেব উল্টে যেতে পারে।)
বিঃদ্রঃ আমি প্রাথমিক শিক্ষক নই। আমার চোদ্দপুরুষের কেউ ছিলেননা। আমি আবার একদমই বেশি ডিগ্রিধারী নই। এই রচনাটি আজ থেকে দশ বছর আগে আমার অশিক্ষক বন্ধুদের সাথে আড্ডার নির্যাস।
Biplab Das
26-07-19

No comments: