Monday, October 14, 2019

বালিঘড়ি





বিনোদবাবু চুরি করেন সময় অবশ্য সবসময় চুরি বলা যায়না কখনো সখনো সময় বাঁচান সেই বাঁচানো সময় জমা করে রাখেন এটিই ওর সঞ্চয় 
ধরুন, বাড়িতে বৌদি বিনোদবাবুকে বললেন বাজারে গিয়ে কিছু মশলা পাতি আনতে। বিনোদবাবু বাড়ির পাশের দোকান থেকেই সেসব নিয়ে চলে এলেন। একটু বেশি দাম পড়ল বা ময়দায় হয়তো একটু গুমো গন্ধ, তাতে বিনোদবাবুর কিছু যায় আসে না। একটু সময় তো জমলো
তিনি অফিসে রোজ একটু দেরিতে যান, আগে ভাগে বেরিয়ে পড়েন। প্রায় আধঘণ্টা সময় চুরি করা যায় এতে। তার বেতন বৃদ্ধির দাবি নেই। আগে হেঁটে অফিস যেতেন। এখন কিছুটা হেঁটে কিছুটা দৌড়ে যান। এতে অনেক 'সময়' জমা হয়। ওদিকে সকালে প্রাতঃভ্রমনের সময়টাও সঞ্চয়ের খাতায় জমা পড়ে। বাথরুমে গায়ে জল ঢেলেই বেরিয়ে আসেন। সাবান টাবান মেখে সময় নষ্ট করার বিলাসিতা দেখাননা। খেতে বসতে না বসতেই খাওয়া শেষ। ইদানীং আবার নিজের জীবন থেকে সময় চুরি করার কায়দা রপ্ত করে ফেলেছেন। ক্যালোরি মেপে অতি অল্প খাচ্ছেন। দিনে চার বেলা খাওয়া। উফ্ অনেকটা সময় জমা করা যায়। 
ছেলেকে দূরের স্কুলে দিলে অহেতুক পৌঁছবার সময় নষ্ট। সিলেবাস যখন একই, পাড়ার স্কুলে দিয়েছেন। যাওয়া আসার মোট জমা সময় থেকে একটু নিয়ে গ্রীষ্মে মাঝে মধ্যে সাইকেলে বাপ-বেটা বেরিয়ে পড়েন। উত্তরের ন্যাড়া একটা টিলার ওপর থেকে ঘুড়ি ওড়ান। অনেকটা ওপরে উঠে গেলে ঘুড়ির সুতো কেটে দেন। লাটাইয়ে আবার একটা ঘুড়ি জোড়েন। ঘুড়িতে কালি দিয়ে আবোল তাবোল লিখে দেন। সেদিন শেষ ঘুড়িতে লেখা ছিল ‘'পাখিদের ঘর আছে, আছে পাড়া, শুধু দেশ নেই।'‘
জমিয়ে রাখা সময়গুলোকে খরচ করেন শখ করে। অন্ধকার ভোরে উঠে নদীর চর বরাবর হাঁটতে শুরু করেন, সূর্য দেখে ফেরেন। বিকেলে পাড়ার জলের ট্যাঙ্কে উঠে পড়েন সূর্য ডোবা দেখতে। পুকুর পাড়ে বসে বসে একটি করে ঢিল ছোঁড়েন, ঢেউ না থামা অবধি অপেক্ষা করেন। উঠোনে পিঁপড়েদের বিস্কুট গুঁড়ো খাওয়ান। খুব ভালো লাগে এমন কয়েকজনকে আবার জমানো সময় ধার দেন। যেমন, সেদিন অফিসে এক পিওন আমতা আমতা করে বলল, “আপনার একটু সময় হবে, একটা কথা বলার ছিল বিনোদ বাবু তাকে একটু না, পাক্কা সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় দিলেন, মেয়ের বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যা শুনলেন। যদিও উপায় কিছু বের করতে পারলেন না। কিন্তু যে বিষয়টি অফিসের কারোর শোনার সময় নেই, তা তিনি শুনলেন তো। অনেকটা সময় জমা করে করে রেখেছেন, তাই না পারলেন এটা
উনি এভাবে বিন্দু বিন্দু করে সময় সঞ্চয় করে সিন্ধু করে ফেলেছেন। নিজের কাছে এতটা সময় গচ্ছিত রাখা এবার মুশকিল হয়ে পড়ছে। তিনি আবার সময় কিপটে, অপাত্রে একটুও দান করবেন না। ভাবছেন কী করা যায়। বয়সও বাড়ছে। এতটা সঞ্চিত সময়কে নষ্ট করে ফট্ করে মরে গেলে ! তখন? এত দিনের সম্পদ !
সমস্যাটি নিয়ে বিনোদ বাবু আমার কাছে সেদিন এলেন। আমিও ভেবে অস্থির। এতটা সময় কোথায় জমিয়ে রাখা যায়! প্রথমে বললাম, একটা মাঠ কিনুন, জমা রাখার অনেক জায়গা। পরে বললাম, না, একটা বড়ো সড়ো পুকুর লিজ নিন। আপাতত বছর কয়েক সেখানে ভাসিয়ে রাখা যাবে। এটাও পরে না করলাম। ভেবে পাইনি কিছুই

 BIPLAB DAS
09/01/2019

No comments: