প্রায়
প্রতিটি বিকেলে
তাদের দেখা
হত। বৃদ্ধ দীর্ঘদেহী, ঋজু, সৌম্য।
বৃদ্ধ ছবি
আঁকেন।
লেকের পাড়ে
তিন নম্বর
গেটের পাশ
দিয়ে হাঁটার
সময় কিশোরটিকে
দেখা অভ্যেসে
পরিণত হয়েছিল। কিশোরের
দু পায়ে
চটি জুতো, খসখসে ছাল ওঠা হাঁটু-কনুই, দু কব্জিতে ক্ষতচিহ্ন, বাগিচা গালে সদ্য কৈশোর। কোঁকড়ানো একমাথা চুলের ঠিক নিচেই দুটি প্রসারিত ঘোলাটে চোখ। বৃদ্ধ দেখতেন। প্রাণ ভরে দেখতেন তাকে। লেক পাড়ে সচরাচর এ পোষাকের একলা কিশোর দেখা যায়না। রেলের বস্তি থেকে যে কটা আসে তারা গাঁজা খায়, পাতা খায়, এ ওর গায়ে পড়ে হুটোপুটি করে, বর্বর কৈশোরীয় খেলায় মাতে। এ
গেটের কাছেই বসে থাকে বেঞ্চিতে। বৃদ্ধের তিনপাক হলে বৃদ্ধের পাশে কিশোর রেলিং ধরে দাঁড়ায়। ততক্ষণে চা ওয়ালা এসে যায়, দুজনেই চা খায়। বৃদ্ধ দাম মেটান। বৃদ্ধ বেরিয়ে গেলে কিশোর চলে যায় ফার্ণ রোডে। সেখানে ওর বন্ধুরা আসে। একটা লম্বা পরিত্যক্ত গাড়ি বারান্দায় সবাই বসে থাকে। কোনো কথা হয়না। বৃদ্ধের সাথেও কোনো কথা হয়নি, তিনমাস পেরিয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে একটি পাহাড় আর একটি নদী মানুষের মর্যাদা পেয়েছে নিউজিল্যান্ডে। ইউনেস্কো থেকে এই বিষয়ের ওপর তাকে আঁকতে বলা ছবিটিও বৃদ্ধ সম্পূর্ণ করতে পারছেন না।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবার। বৃদ্ধ এলেন। তিনপাক হতেই রেলিংয়ে রিলাক্স হলেন। চা এল।
কিশোরের দেহ তখন মেডিক্যাল কলেজের মর্গে, বস্তাবন্দী। প্রসারিত চোখের পাতা বন্ধ, খসখসে চামড়ায় চটের রোঁয়া। অ্যাসাইলামের কড়ার দাগদুটো কব্জিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পরদিন প্রথম পাতায় খবর। এ শহরের বারো জন মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরকে সন্দেহের বশে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।
শুক্রবার ছবি জমা পড়ল।
BIPLAB DAS
19/01/2019
No comments:
Post a Comment